#হাবিবুর রহমান, ঢাকা: ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূণ সম্পরক চিনের মোটেই পছন্দ নয়। অগ্রগতিশীল শেখ হাসিনা সরকারকে পাশে পেতে তথা বাংলাদেশের বৃহৎ বাজার ধরতে চিন এখন ব্যরথ পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তারে মরিয়া চিন। অবশ্য বরাবরই চিনের না পছন্দ শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ সরকার। সব ধরণের সমথন জানিয়ে খালেদা জিয়া সরকারের পাশেই থেকেছে। যে কোনও মূল্যে ঢাকাকে কবজা করে ভারতকে বেকায়দায় ফেলার ছক কষছে চিন।
বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশিগুলোর দৌঁড়ঝাঁপের মধ্যে ভারত সাফ জানিয়ে দিয়েছে এটা বাংলাদেশেল অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। ভারতের এই ঘোষণার দুদিনের মাথায় মরীয়া বুধবার জানিয়ে দিল বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে চিন কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
প্রসঙ্গতঃ সেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকে বিশ্ব দুভাগ হয়ে পড়েছিল। ২৫ মাচ রাতে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ভারত পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। এক কোটি বাংলাদেশিকে আশ্রয়-খাদ্য-বস্ত্র, বাজার খরচ দিয়ে সহায়তা দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে। এরপর ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করে এগিয়ে আসে রাশিয়া। পক্ষান্তরে গোলাবারুদ নিয়ে পাকিস্তান সামরিকজান্তার সঙ্গে হাত মেলায় চিন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি মুসলিম দেশ।
বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে ভারতের মাথা ব্যথা নেই জানিয়ে দেওয়ার পর শেখ হাসিনা সরকারের পাশে থাকতে মরীয়া চিন এবার জানিয়ে দিল তারা কোনো হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়ে দিল বাংলাদেশে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। অর্থাৎ যে কোনও মূল্যে ঢাকাকে কবজা করে ভারতকে বেকায়দায় ফেলার বেজিংয়ের ছক বহুদিনের। রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘চিন কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারাই ঠিক করবে কীভাবে নির্বাচন হবে।
আজ বুধবার রাজধানী ঢাকার শের-ই-বাংলা নগরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের দপ্তরে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন চিনা রাষ্ট্রদূত। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইয়াও ওয়েন এসব কথা বলেন।চিনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু হিসাবে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে সবরকম সহযোগিতা করবে চিন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গেলে ২০২৬ সাল পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্যে যেসব প্রতিবন্ধকতায় পড়তে পারে বাংলাদেশ সেখানেও শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিয়ে পাশে থাকবে বেইজিং।
বিদেশি ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে নিয়ে তারা চিন্তিত নয় বলেও জানান চিনা রাষ্ট্রদূত। এছাড়া পদ্মা সেতুর ফলে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নের যে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে তাতেও চিন সহায়তা করবে বলে জানান তিনি। এদিকে চিনের শি জিনপিং প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে সেপ্টেম্বরেই ভারতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার আমলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন মাত্রা লাভ করেছে। বাংলাদেশের পায়রা সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রামের বে-টার্মিনাল ও মোংলা বন্দরে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে দিল্লি।
খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দর এবং দিনাজপুরের বিরল স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাধিকাপুর স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালুরও উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে শুরু হয়েছে সাধারণ নির্বাচনের তোড়জোড়। চলতি বছরের শেষের দিকেই শুরু হতে পারে ভোটযুদ্ধ। লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে শাসক-বিরোধী উভয়েই। এই প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রের উৎসবে ‘পাশে থাকবে ভারত’ বলেই বিশ্বাস আওয়ামি লিগের। আওয়ামি লিগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ৬ থেকে ৯ আগস্ট ভারত সফর করে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। ভারতের শাসকদল বিজেপির আমন্ত্রণেই এই সফরসূচি নেয় বাংলাদেশের শাসকদল।
সফর শেষ করে ঢাকায় এসে আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, “ভারত বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়।” ইঙ্গিতে ভারতা তাদের পাশে দাঁড়াবে বলেই জানান তিনি। বিজেপির শীর্ষনেতা ও ভারত সরকারের উচ্চপদস্থরা বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার উপর জোর দিয়েছেন। এক্ষেত্রে, মার্কিন ভিসা নীতি, র্যা বের ওপর নিষেধাজ্ঞা-সহ নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের বিষয়গুলিও আলোচনায় এসেছে।
নয়াদিল্লিকে আওয়ামি লিগের প্রতিনিধিরা আশ্বাস দিয়েছেন, বাংলাদেশের জমিতে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চলতে দেওয়া হবে না। আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় থাকায় জামাত-ই-ইসলামি, বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল ও সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় না থাকলে পাকিস্তানের প্রভাব আবার বেড়ে যাবে, যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ভারতের মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতারাও তা স্বীকার করেছেন বলে লিগের নেতারা জানিয়েছেন। দিল্লি ভালই জানে, খালেদা জিয়ার পাকিস্তানপন্থী দল বিএনপি ক্ষমতায় ফিরলে উত্তর-পূর্ব ভারতে জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে।
