News Britant

মা আসছে, মাটির গন্ধ বলছে, কিন্তু মন খারাপ রায়গঞ্জের মৃৎশিল্পীদের

Listen

( খবর টি শোনার জন্য ক্লিক করুন )

#সুমন রায়, রায়গঞ্জঃ দুর্গোৎসব বাঙালির দোরগোড়ায়। আর কিছুদিন বাদেই ঢাকে কাঁঠি পড়বে। এই অবস্থায় মন ভালো নেই মৃৎ শিল্পীদের।প্রতিবছর দুর্গা পুজোর আগে যে ব্যস্ততা থাকে মৃৎশিল্পীদের এবছর যেন কোথাও হারিয়ে গেছে। রায়গঞ্জের বেশির ভাগ প্রতিমা তৈরি হয় রায়গঞ্জের কাঞ্চনপল্লীতে। প্রতিবছর যে চেহারাটা দেখা যায় কাঞ্চনপল্লীতে এই বছরের চেহারাটা অনেকটাই আলাদা। যেমন, রাস্তার ধারে সাজানো নেই মূর্তি।বাঁশের কাঠামো একটা দুটো তাও বৃষ্টিতে ভিজছে।ঘরের ভেতরে তেমন প্রতিমার ভীড় নেই।ব্যস্ততাও একটু আধটু।

আসলে একদিকে করোনার চোখরাঙানি, অপরদিকে বৃষ্টির খামখেয়ালিপনা অনেকটাই মৃৎশিল্পে আঘাত আনছে। লকডাউনে বাজেট কমেছে প্রত্যেক পুজো কমিটির। পুজোর প্রতিমায়ও তার প্রভাব পড়েছে। এই বিষয়ে মৎশিল্পী ভানু পাল জানান, “লকডাউনে এবারের অবস্থা মারাত্মক খারাপ। প্রতিবছর এই সময় যে ব্যস্ততা লেগে থাকত তার সিকি ভাগও নেই এবার।অর্ডার কমেছে প্রতিবারের তুলনায়। প্রতিমার আয়তন কমেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে অসুবিধা করছে আবহাওয়া। বৃষ্টি লেগেই আছে গোটা মরসুম জুড়ে। যার দরুণ আমাদের প্রতিমাগুলো শুকাতে সমস্যা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি আমাদের জন্য।

প্রধানমন্ত্রী কুটির শিল্প ও মাঝারি শিল্পের জন্য যে লোন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তা আমাদের মত শিল্পীদের পক্ষে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবুও আমি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন রাখব যাতে আমাদের সুরাহা হয়।” রাজ্য সরকারের পুরহিতদের ভাতা দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পুরোহিতদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে কিন্তু পুরহিতরা যার আরাধোনায় পুজো করবেন সেই মূর্তি তৈরি করা শিল্পদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।” সত্যিতো তাই! যাদের ব্যবসা শুধু এই দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে। যাদের পেট চলে এই দুর্গাপুজোর উপরেই তাদের এই দুঃসময়ে অন্তত সরকারের পাশে দাঁড়ানোটা দরকার।

এরপরই কিছুদূর হেঁটে আমরা পৌঁছালাম আরও এক মৃৎশিল্পীর কাছে।তিনি হলেন অপর্ণা পাল।একসময় তার স্বামী প্রতিমা বানাতেন কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ার পর এখন তিনিই সম্পূর্ণটা সামলান।আমরা পৌঁছে দেখলাম দাঁড়িয়ে থেকে অপর্ণাদেবী মা দুর্গার সাজগোজের দেখভাল করছেন। রঙ হচ্ছে মায়ের শরীর। ব্যস্ততা আছে তবে প্রতিবছরের থেকে অনেকটাই কম। বৃষ্টি কারনে সম্পূর্ণ কাজ ঘরের মধ্যেই। দুর্গা পুজোর প্রস্তুতি সম্পর্কে অপর্ণা দেবী জানান, “প্রতিবছর চার-পাঁচ মাস আগে থেকেই প্রতিমার অর্ডার আসতে শুরু করে কিন্তু এবার করোনার জন্য প্রতিমার অর্ডার তেমন আসে নি। পুজো উদ্যোক্তাদের বাজেট নেই বলে প্রতিমার আয়তন কমিয়ে দিয়েছে। একদিকে করোনা ক্ষতি করছে অন্যদিকে নিয়মিত বৃষ্টির কারনে সমস্যা হচ্ছে কাজে। সব মিলিয়ে এবারের পুজোতে আমরা খুব একটা ভালো নেই।”

করোনা মহামারীর জেরে প্রত্যেকের কর্মজীবনে আঘাত এসেছে ঠিকই কিন্তু যাদের এই একটা উৎসবকে কেন্দ্র করে জীবন জীবিকা তারা আজ সত্যি দুঃসময়ের মধ্যে। হয়তো এই দুঃসময় কেটে উঠবে এইসব মৃৎশিল্পীদের মা দুর্গার মূর্তি গড়ার মধ্যে দিয়ে। তুলির টানে ফুটে ওঠা মা দুর্গার চোখ পুড়িয়ে দেবে এই অতিমারীকে। মা দুর্গার আরাধনার মধ্যে দিয়ে  হয়তো আবারও আমরা আলোর পথে ফিরব।

News Britant
Author: News Britant

Leave a Comment