News Britant

শ্যাম-রাইয়ের কথা

Listen

( খবর টি শোনার জন্য ক্লিক করুন )

আনন্দ ব্যানার্জী

লাল মাটির কাঁকড়ে ঢাকা আঁকাবাঁকা সড়কটা ধরে আমাদের সাইকেল রিক্সা দুটো এসে থামল টুরিস্ট-লজের গেটের সামনে। আমাদের দলনেতা বড়দা ভাড়া চুকিয়ে এগিয়ে গেল রিসেপ্‌সন ডেস্কের দিকে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে এসেই আমাদের হাতে মালপত্তর দিয়ে হাত দুটোকে আকাশের দিকে টানটান করে কোমরটাকে পেছনের দিকে ঈষৎ ঝুকিয়ে একটা লম্বা হাই তুলে বাবলুকে বলল, “ঘর দুটো দেখেনে, বেয়ারাকে তোদের সঙ্গে আসতে বলেছি। পাঁচ মিনিটে তৈরি হয়ে নে। আমি বরং এই ফাঁকে তোদের জলখাবারের বন্দোবস্তটা করে আসি।” অগত্যা ‘জো হুকুম’ বলে আমরা চারজন ব্যাগপত্তর গুছিয়ে বেয়ারার পিছু নিলাম।

বড়দার পাঁচ মিনিট প্রায় কুড়ি মিনিটে গিয়ে ঠেকল। ওদিকে পেটের মধ্যে তখন ছোট-বড় দু-ধরনের ইঁদুরই মোক্ষম ডনবৈঠক দিতে শুরু করেছে। মোরাম বিছানো পথে চোখ যেতেই দেখলাম এক গাল হাসি আর হাতে দুটো বড় ঠোঙায় খাবার নিয়ে হাজির আমাদের প্রিয় বড়দা। “সবাই তৈরি তো ? চটপট খেয়ে নে, এক্ষুনি বেড়িয়ে পড়বো। পথে যেতে যেতে তোদের বিষ্ণুপুরের ইতিহাসটা ঝালিয়ে দেব।” আমাদের দলের কনিষ্ঠতম সদস্য ন্যাপলার দায়িত্ব মালপত্তর সামলানো। সদ্য হায়ার-সেকেন্ডারি পাশ করে বেড়ানোর নেশায় বড়দা এন্ড কোং-এর সদস্যপদ নিয়েছে ন্যাপলা। আমি, ফুটবলার বাবলু, আর ইতিহাসের ছাত্র বুম্বা বড়দার দলের বহু পুরনো সদস্য। ইতিহাস সম্পর্কে বড়দার অগাধ জ্ঞান। যখনই সুযোগ পায় আমাদেরকে তার কিছুটা উজাড় করে দেয়।জলখাবারের পাট চুকিয়ে ক্যামেরা বগলদাবা করে বড়দার সঙ্গে বেড়িয়ে পড়লাম বিষ্ণুপুর দর্শনে। এক গাল ধোঁয়া ছেড়ে শুরু করলো মল্লরাজধানী বিষ্ণুপুরের উৎপত্তির ইতিহাস।

“মল্লরাজাদের বংশানুক্রমিক দীর্ঘদিনের শাসনে বিষ্ণুপুর যে একটি আদর্শ রাজধানী হিসাবেই গড়ে উঠেছিল সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তবে বিষ্ণুপুরের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস এখনো পর্যন্ত লেখা হয়ে ওঠেনি।” এইটুকু শুনেই বুম্বা একটা প্রশ্ন করে বসলো বড়দাকে। “তাহলে তুমি জানলে কোত্থেকে?” বড়দার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো এধরনের প্রশ্নে তেলেবেগুনে হয়ে যেত। তবে শ্রীযুক্ত বড়দা তার দু আঙুলের ফাঁকে ধরে থাকা আধপোড়া বস্তুটিতে একটা লম্বা টান দিয়ে ঠোঁটের কোণে ইষৎ হাসি নিয়ে আবারও শুরু করলো তার গল্প। “যেটুকু লেখা হয়েছে তার বেশ কিছু অংশ কিংবদন্তি বা লোকগাথা থেকে নেওয়া।

তবে সবচেয়ে বড় প্রমাণ বিষ্ণুপুরে মাকড়া পাথর বা টেরাকোটা মন্দিরসৌধ এবং তার গায়ে আটকে থাকা স্মৃতিফলকগুলি। বিষ্ণুপুরের ইতিহাস রচনাতে যে লৌকিক গাঁথা বা কিংবদন্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে একটি হল মল্লরাজ জগৎমল্লের বিষ্ণুপুরে রাজধানী স্থাপনেরগল্প। কথিত আছে আদি মল্লের পিতা ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভব এক অখ্যাত নৃপতি পদব্রজে উত্তর ভারত থেকে দক্ষিণ ভারত যাত্রা করছিলেন। পথের মাঝে তার আসন্ন প্রসবা স্ত্রীকে নিয়ে কোতলপুরের কাছে লাউগ্রামে মনোহর পঞ্চানন নামে এক ব্রাহ্মণের গৃহে আশ্রয় নেয়। সেখানে তার এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়, কিন্ত প্রসবের পরেই তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। অগত্যা সেই নৃপতি তার নবজাতককে ব্রাহ্মণের হাতে সমর্পণ করে বিদায় নেন। ক্রমেই সেই ছোট্ট শিশু শিক্ষায়, বাহুবলে আর পাঁচজনের থেকে স্বতন্ত্ররূপে বড় হতে লাগল। তার মতো শক্তিশালী মল্লযোদ্ধা ধীরে ধীরে রাজার সান্নিধ্যে আসতে লাগল। তাকে রাজকার্যে নিযুক্ত করা হল। তারপর একদিন রাজার ইচ্ছাতে এবং রাজ্যের সমস্ত শুভানুধ্যায়ীর অনুরোধে প্রদ্যুম্নপুরের রাজসিংহাসনে তার রাজ্যাভিষেক হল। তিনিই হলেন মল্লরাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আদি মল্ল। সময়কাল সম্ভবত সপ্তম শতাব্দীর শেষ দশক, কেননা তার প্রায় তিনশো বছর পর ঐ রাজবংশেরই রাজতিলক জগৎমল্ল তাঁর রাজধানী প্রদ্যুম্নপুর থেকে বিষ্ণুপুরে স্থানান্তরিত করেন।” এইটুকু বলে বড়দা একটু থামলো। আমরা তার প্রত্যেকটা কথা গোগ্রাসে গিলছি। এতক্ষণ পর ন্যাপলা একটা প্রশ্ন করল। “আচ্ছা বড়দা, জ্যাঠার মুখে শুনেছি বিষ্ণুপুরের ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম অধ্যায় নাকি মহারাজ বীরহাম্বিরের রাজত্যকালে?”

“ঠিকই শুনেছিস। সে গল্পে আসছি, তবে তার আগে তোদের দেখিয়ে নিয়ে আসি ৯৯৭ খ্রীস্টাব্দে তৈরি হওয়া বিষ্ণুপুরের সবচেয়ে আদি মৃন্ময়ী মন্দির।” বড়দার পিছু পিছু আমরা গিয়ে দাড়ালাম মন্দিরের মূল ফটকের সামনে।বিশাল এক প্রাচীন বটবৃক্ষের উত্তরদিকে রূপোর সিংহাসনে বিরাজমান মৃন্ময়ী মায়ের দশভূজা মূর্তি। মাতৃমন্দির দর্শন করে আমরা তিনজনে গিয়ে বসলাম বড়দার পাশে।“মৃন্ময়ী মন্দিরটি বিষ্ণুপুরের সবচেয়ে পুরনো মন্দির বলেই জানা যায়। ৯৯৭ খীষ্টাব্দে, অর্থাৎ ৪০৪ বঙ্গাব্দে মহারাজা জগৎমল্ল দেবীর আদেশ পেয়ে মন্দির ও মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এর পিছনেও এক গল্প রয়েছে। শুনবি নাকি সেই গল্প?” বড়দার প্রশ্নে আমরা চারজন একসঙ্গে ঘাড় নেড়ে সোজা হয়ে বসলাম। বড়দাও গাছতলায় বেশ গুছিয়ে বসে শুরু করলো তার গল্প। “এই মন্দির যে সময় তৈরি হয় সে সময় এখনকার এই বিষ্ণুপুরের কোন চিহ্নই ছিল না। ঘন জঙ্গলে ঘেরা অরণ্যভূমি। মল্লরাজ জগৎমল্ল একদিন শিকারের খোঁজে বেড়িয়েছেন। সঙ্গে তাঁর পোষা বাজপাখী। হঠাৎই তাঁর চোখে পড়লো একটি সুন্দর হরিণ। ছুটলেন তাঁর পিছনে। কিন্তু বেশ কিছুদূর যাওয়ার পরে হরিণটি কোথায় যেন হারিয়ে যায়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রাজা একটি বটবৃক্ষের নীচে দাঁড়িয়ে পড়েন। ওদিকে সেই গাছের উপরে বসে থাকা একটি বককে দেখে রাজার পোষা বাজপাখীটির শিকারের ইচ্ছে জাগে। তৎক্ষণাৎ পাখীটি উড়ে যায় তার শিকারের দিকে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সেও পরাজিত হয়ে ফিরে আসে। রাজা কিঞ্চিৎ বিস্মিত হলেন। সেই মুহূর্তে তাঁর সামনে দণ্ডায়মান হলেন এক অপরূপা নারী। গভীর জঙ্গলে সেই একাকিনী নারীকে দেখে অবাক হলেন জগৎমল্ল। রাজার চমক ভাঙিয়ে নারী উধাও হতেই এক দৈববাণী হল ‘আমি মা মৃন্ময়ী, তোমার সামনেই আমার মূর্তি প্রোথিত আছে। সেখান থেকে উদ্ধার করে মন্দির প্রতিষ্ঠা কর। এখানেই রাজধানী গড়ে তোলো। তোমার বংশধরেরা আমার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ধনে-মানে বড় হবে।’ মায়ের কথা মান্যকরে মৃন্ময়ী মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন রাজা জগৎমল্ল। রাজধানী স্থানান্তরিত হলো এইখানে। নাম দিলেন বিষ্ণুপুর। এই জায়গা তখন গভীর জঙ্গলে ঢাকা। গড়ে উঠলো রাজধানীর উপযোগী সমস্ত রকম উপকরণ। ক্রমে বাড়তে লাগল বসতি। যখন একদিকে জমে উঠেছে নতুন রাজধানী তখন অপরদিকে বাড়ছে এই মল্লরাজ্য বা মল্লভূমের পরিধি। আর সেই সাথে চলেছে মা মৃন্ময়ীর নিরলস আরাধনা। অতীতের স্মৃতি বহন করে চলেছে এই মন্দির। এখনও দুর্গাপূজোর সময় এখানে পনেরো দিন যাবৎ বিশেষ পূজোর আয়োজন হয়।” এইটুকু বলে বড়দা একটু থেমে ব্যাগপত্তর নিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললো, “নে চল, এবার তোদের আরেকটা মন্দির দেখিয়ে আনি। এর নাম রাধাশ্যাম মন্দির।” বড়দার কথামতো আমরাও উঠে পড়লাম।

মৃন্ময়ী মন্দিরের পুবদিকে রাধাশ্যাম মন্দিরের বিশাল নহবতখানা। গুটিগুটি পায়ে ঢুকে পড়লাম মন্দিরের চাতালে। বড়দাও শুরু করলো তার স্মৃতিচারণ। “মল্লরাজ চৈতন্য সিংহ ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ইতিহাস বলছে যে চৈতন্য সিংহের রাজত্বকাল এমনিতে সুখের হলেও বহিরাগত অশান্তি বিষ্ণুপুরকে বেশ বিব্রত করে তোলে। ইংরেজ শক্তি তখন বাংলার বুকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বাংলায় তখন প্রবল অর্থ সংকট দেখা দেয়। সে সব বাধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে রাজা তাঁর পুর্বপুরুষের মন্দির প্রতিষ্ঠার ধারাকে বজায় রাখেন। বলতে পারিস আভিজাত্য বজায় রাখার এহেন এক প্রাচীন বংশপরম্পরা। সহস্র কারিগরের অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি হল এই বিশাল মন্দির। এই মন্দিরের কৃষ্ণমূর্তি অন্য মন্দিরের তুলনায় ছিল অনেক বড়।”

কথায় কথায় পা বাড়ালাম সামনের দিকে। ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে মল্লরাজ বীর সিংহদেবের তৈরি রাধালালজিউ মন্দির দেখে এগিয়ে গেলাম আরো উত্তরে। মহারাজা বীর সিংহ নির্মিত উজ্জ্বল মাকড়া পাথরের এই স্থাপত্যকে শুধু পাথর দরজা বললে ভুল হবে। একে বিষ্ণুপুর রাজদরবারের দুর্গ বলাই সমুচিত। রাস্তা পারাপার ছাড়াও এই তোরনের দু’দিকে সৈন্য-সুরক্ষার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। তোরণ পেরিয়ে এগিয়ে চললাম আরো সামনে। চোখে পড়লো মহারাজা বীর সিংহের আমলেই তৈরি হওয়া আরো একটি ছোট পাথর দরজা। অনেকেই একে গড়দরজাও বলেন। এর ঠিক পাশেই রয়েছে উঁচু ঢিবি। স্থানীয় ভাষায় মুর্চার পাহাড়, আর তার মাঝে রয়েছে পরিখা। কালের প্রবাহে ঢিবির ক্ষয় হয়েছে, আর পরিখাও মজে গেছে। তবে বর্ষার সময় জল থৈ থৈ করে এই পরিখায়। একসময় শারদীয়া দুর্গাপূজার সন্ধিক্ষণ নিরুপন হত এই মুর্চার পাহাড়ের উপর গর্জে ওঠা কামানের শব্দে। সে শব্দ শোনার জন্য আজও সমগ্র বিষ্ণুপুরের মানুষ কান পেতে থাকেন নিশ্চুপ হয়ে।

সম্বিত ফিরল ন্যাপলার কথায়। “বড়দা গো বড্ড ক্ষিদে পেয়েচে।” আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট বলে বড়দা ওর কথা ফেলতে পারলো না। “সেই ভালো, হোটেলে গিয়ে স্নান খাওয়া সেরে, একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বিকেলের দিকে বেরনো যাবে। খেতে খেতে বরং তোদের বীরহাম্বীরের ইতিহাসটা বলবো।” বড়দার প্রস্তাবটা খারাপ নয়। খিদে যে আমাদেরও পায়নি তা নয়। চটপট ক্যামেরা ব্যাগে পুরে রওনা দিলাম হোটেলের দিকে। যেতে যেতে পথে পড়লো বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত জোড়বাংলা মন্দির। বড়দার মুখে মন্দিরের ইতিহাস শুনতে শুনতে এগোতে লাগলাম। “১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে মল্লরাজ রঘুনাথ সিংহ বিখ্যাত এই টেরাকোটা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরটির নাম জোড়বাংলা কেন বলতে পারিস?” আমাদের উত্তরের অপেক্ষা না করে বড়দাই বললো “এই মন্দিরটিতে দুটো বাংলা চালের উপর একটা শিখর রয়েছে, তাই এর নাম জোড়বাংলা। প্রকৃত নাম কৃষ্ণরায় মন্দির। মন্দিরের গায়ে পোড়ামাটির কাজগুলো দেখেছিস নিশ্চয়ই। ওখানে যেমন রামায়ন, মহাভারত ও কৃষ্ণলীলা রয়েছে, তেমনই আবার রয়েছে যুদ্ধ ও শিকারের দৃশ্য।এ এক অনবদ্য শিল্পকলা, যা অন্য কোথাও চোখে পড়বে না। আরো একটা ঠিক এমনই শিল্পকলার নিদর্শন পাবি শ্যামরায় মন্দিরে। জোড়বাংলা এবং শ্যামরায়, এই দুটি সেরা টেরাকোটার মন্দিরই মল্লরাজ রঘুনাথ সিংহের আমলে তৈরি হওয়ায় ওই সময়টাকে বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা শিল্পের উৎকৃষ্ট লগ্ন বলা যেতে পারে। ঠিক যেমনটি মোগল যুগে শাহাজানের রাজত্বকালে সেজে উঠেছিল ভারতের স্থাপত্য ও শিল্পকলা। অমিয় কুমার বন্দোপাধ্যায় তাঁর “বাঁকুড়া জেলার পুরাকৃতি” গ্রন্থে বলেছেন, বিষ্ণুপুরের জোড়বাংলা মন্দির বাঁকুড়া তথা তাবৎ রাঢ় দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেবালয়।” গল্প শুনতে শুনতে আমরা কখন যে টুরিস্ট লজের গেটের সামনে পৌঁছে গেছি খেয়ালই নেই। পশ্চিমের আকাশে একগুচ্ছ কালো মেঘ এসে জমা হয়েছে। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে লজের ডাইনিং রুমে এসে হাজির হলাম চার মক্কেল। বড়দা আগে থাকতে এসেই গুছিয়ে বসেছে। গরম ভাত আর মুরগির মাংসের ঝোল মাখতে মাখতে বড়দার গল্পের পরের অংশ শুরু হল।

“জগৎমল্লের পর একাদশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকে ষোড়শ শতাব্দীর অষ্টম দশক পর্যন্ত প্রায় ছ’শো বছর ব্যাপী বিষ্ণুপুর তথা মল্লভূম রাজ পরিবারের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা যে ঘটেনি তা নয়।ছ’শো বছরের ইতিহাসে উত্থান পতনের চাকা অবশ্যই ঘুরেছে, কিন্তু সেই ইতিহাসকে ছাপিয়ে গিয়েছে মহারাজা বীরহাম্বীরের রাজত্বকাল। যার সময়সীমা ১৫৮৭ থেকে ১৬১৯ খ্রিষ্টাব্দ। ১৫৮৭ সালে বীরহাম্বীর বিষ্ণুপুরের সিংহাসনে বসেন। দিল্লির মসনদে তখন মোগল সম্রাট আকবর। সুবা বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হলেন মোগল সেনাপতি মানসিংহ। ওদিকে পাঠান সর্দার সুলেমান কররানী নিজেকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছেন। মোগল-পাঠান দ্বন্দ্বে বীরহাম্বীর মোগলদের পক্ষ নেন, আর সেটাই বিষ্ণুপুরের ইতিহাসের এক আমূল পরিবর্তন আনে।” বড়দার গল্পে আমরা বিভোর, যেন চোখের সামনে চলচ্চিত্রের মতো ভেসে উঠছে মল্লভূম রাজ পরিবারের ঐতিহাসিক পটভূমি। “বীরহাম্বীর তখন শুধু হাম্বীর নামে পরিচিত ছিলেন। একদিন হঠাৎই তাঁর বাবা ধারীমল্লের রাজ্য আক্রমণ করে বসলেন পাঠান সর্দার সুলেমান কররানীর পুত্র দায়ুদ খাঁ। বৃদ্ধ রাজা তাঁর সুযোগ্য পুত্রের উপর রাজ্য ও রাজধানী রক্ষার ভার দিলেন। যুবরাজ হাম্বীর তাঁর নিজের সৈন্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাঠানদের বিশাল বাহিনীর উপর। প্রচুর পাঠানের রক্তে মল্লভূমের লাল মাটি হয়ে উঠলো আরো রক্তিম। পরাজিত হল পাঠান বাহিনী। বন্দি হলেন দায়ুদ খাঁ। হাম্বীর কিন্তু তাঁকে অপমানিত করেননি, সসম্মানে মুক্তি দিলেন দায়ুদ খাঁকে। সম্রাট আকবর সে খবর পেয়ে বন্ধুত্ব করলেন হাম্বীরের সাথে। উপাধী দিলেন বীরহাম্বীর। পরবর্তীকালে মোগলদের অনেক সাহায্য করেছিলেন বীরহাম্বীর। এমনকি মানসিংহের পুত্র জগৎসিংহকেও পাঠানদের কাছ থেকে মুক্ত করেছিলেন তিনি। এহেন, তেজস্বী বীরহাম্বীর একসময় পরম বৈষ্ণবে পরিণত হলেন। ব্রাহ্মণ পন্ডিত শ্রীনিবাস আচার্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন তিনি এবং নিজেকে নিয়োজিত করেন বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারে। শুরু হলো বিষ্ণুপুরের এক নতুন ইতিহাস। শ্রীনিবাসের সাথে বৃন্দাবন ঘুরে এসে রাজা গড়ে তোলেন একের পর এক বিষ্ণু মন্দির। বিষ্ণুপুরের নাম দেন গুপ্ত বৃন্দাবন। গড়ে তুললেন রাসমঞ্চ, শুরু হলো রাস উৎসব। তাঁর উত্তরসূরির হাতেও তৈরি হয়েছে এক বা একাধিক মন্দির। কিন্তু কালচক্রে বিষ্ণুপুরের শৌর্য একসময় বিকিয়ে গেল। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রাজত্বে ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে বর্ধমানের মহারাজা বিষ্ণুপুর রাজত্বের সিংহভাগ নিলামে কিনে নেন বিষ্ণুপুরের শেষ প্রভাবশালী ও স্বাধীন মল্লরাজা চৈতন্য সিংহদেবের উত্তরসূরি মাধব সিংহদেবের কাছ থেকে। শেষ হয়ে যায় বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যময় বুনিয়াদ। তবে মল্লরাজাদের গৌরব ও কীর্তি অম্লান হয়ে রইলো ইতিহাসে, মন্দির ও সৌধে। তবে এখানেই শেষ নয়, বিষ্ণুপুরের ইতিহাস শুধুমাত্র স্থাপত্য, ভাস্কর্য্য বা পোড়ামাটির শিল্প নয়, ভারতীয় সংগীত চর্চা ও আলোচনার ক্ষেত্রে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে “বিষ্ণুপুর ঘরানা”। এ ঘরানায় যেমন বহিরাগত গায়ন-বাদন পদ্ধতির স্রোত এসে মূল প্রবাহের সৃষ্টি করেছে, তেমনি শৈল্পিক চেতনা, উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা এই সংগীত ধারাকে প্রবল স্রোতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ইতিহাস বলে “বিষ্ণুপুর ঘরানা” মূলত সৃষ্টি হয়েছিল অষ্টাদশ শতকের শুরু থেকে অর্থাৎ সেনী ঘরানার প্রবাদপুরুষ বাহাদুর খাঁর আগমনের পর থেকে। বিষ্ণুপুরের রাজসিংহাসনে তখন রয়েছেন দ্বিতীয় রঘুনাথ সিংহ। চারিদিক তখন মুখরিত কীর্তনাদি সঙ্গীতে। রাজা ছিলেন সঙ্গীতের গুণগ্রাহী। দিল্লীতে ওস্তাদ গাইয়েদের দুরবস্থার খবর পেয়ে তানসেনের উত্তরপুরুষ ও বিখ্যাত ধ্রুপদী গোলাপ খাঁ-এর প্রপৌত্র বাহাদুর খাঁ সাহেবকে তাঁর রাজসভায় আসন প্রদান করেন। খুব বেশীদিন তিনি বিষ্ণুপুরে ছিলেন না, তবে সেই অল্প সময়ের মধ্যেই তৈরি করে দেন তৎকালীন “বিষ্ণুপুর ঘরানা”। আরেকজনের নাম না বললেই নয়, তিনি হলেন যদুনাথ ভট্টাচার্য বা যদুভট্ট। তাঁর বাবা মধুসূদন ভট্টাচার্য ছিলেন একজন বিখ্যাত সেতার বাদক। বাবার কাছেই তাঁর সঙ্গীত শিক্ষা শুরু। এক জায়গায় স্থির থাকার পাত্র ছিলেন না তিনি। সঙ্গীতের জন্য ছুটে বেরিয়েছেন বিষ্ণুপুর থেকে কুচিয়াকোল, পঞ্চকোট থেকে কলকাতা, এমনকি ত্রিপুরা পর্যন্ত। কলকাতায় থাকাকালীন তাঁর সাহচর্যে এসে ধন্য হয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যদুভট্ট দেশ জুড়ে বিষ্ণুপুর ঘরানাকে প্রচার করেছেন এবং চিনিয়ে গিয়েছেন তাঁর মাটির সঙ্গীতের রস।” এতটুকু বলে থামলো বড়দা। আমরা তার গুণমুগ্ধ শ্রোতার মতো বিস্ময়ে বিহ্বল। ঘোর কাটলো বড়দার কথায় “নে চটপট তৈরি হ, আকাশের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বৃষ্টি আসার আগে বাকি মন্দির কটা চটপট দেখি আসি। তারপর সন্ধ্যেবেলা বসে মুড়ি তেলেভাজা খেতে খেতে জমিয়ে ভুতের গল্প হবে। অনেক ইতিহাস শোনা হল, এইটুকু হজম করতে তোদের সময় লাগবে বুঝতে পারছি। চল আর দেরি নয়, আমি বাইরে অপেক্ষা করছি, তোরা তোদের ব্যাগপত্তর নিয়ে চলে আয়।”

সন্ধ্যেবেলা ভূতের গল্প আর তারপর রাত পোহালেই ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়া সেই ফেলে আসা নিয়মের রাস্তায়। আবার শুরু হওয়া সেই দৈনন্দিন রুটিনের ব্যস্ততায় হয়তো বা চাপা পড়ে যাবে এতো সব অজানা ইতিহাস। আমরা ভুলতে পারি, কিন্তু হাজার বছরের পুরনো মন্দিরের ফোকলা দেয়ালের গায়ে গজিয়ে ওঠা বট-অশ্বত্থর শিরা-উপশিরায় বয়ে চলেছে তারই গৌরবময় ইতিহাস। যা কোনোদিনও স্তব্ধ হবে না কালের ব্যস্ততায়।

ক্যামেরা বগলদাবা করে বেড়িয়ে পড়লাম বড়দার সঙ্গে। প্রথমেই গিয়ে হাজির হলাম মহারাজা বীরহাম্বীরের তৈরি রাসমঞ্চের সবুজ প্রাঙ্গনে। ১৫৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি হওয়া এ ধরনের অভিনব পিরামিডাকৃতি স্থাপত্য বাংলার আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। এই সৌধটিতে নির্দিষ্ট কোন দেবতাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল বলে জানা যায়নি। তবে এখানে বিষ্ণুপুরের বিভিন্ন মন্দিরের রাধাকৃষ্ণের মূর্তি নিয়ে এসে যে বিশাল রাসোৎসব পালন করা হত সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। পায়ে পায়ে এগিয়ে চললাম শ্যামরায় মন্দিরের পথে। ১৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দে মল্লরাজ রঘুনাথ সিংহ দ্বারা নির্মিতএই মন্দিরের পাঁচটি বিশিষ্ট শিখর থাকায় একে পাঁচচূড়া বলা হয়ে থাকে। জোরবাংলার মতোই এই মন্দিরের গায়ে অপূর্ব টেরাকোটার সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। গবেষক অমিয় কুমার বন্দোপাধ্যায় তাঁর “বাঁকুড়া জেলার পুরাকৃতি” গ্রন্থে বলেছেন, “টেরাকোটা অলঙ্করণের উৎকর্ষ ও অজস্রতায় এ মন্দিরটি বঙ্গ সংস্কৃতির এক মহা মূল্যবান সম্পদ।” মন্দিরের একমাত্র ঢালু ছাদ ও চূড়া শীর্ষগুলি ছাড়া বাইরে ও ভেতরের সমস্ত অংশে নিখুঁত টেরাকোটার কাজ দেখা যায়। চলার পথে চোখে পড়ল এক বিশাল গুমগড়। তারপর একে একে দেখলাম মদনমোহন মন্দির, সর্বমঙ্গলা মন্দির, রাধাগোবিন্দ মন্দির, কালাচাঁদ মন্দির, রাধামাধব মন্দির, নন্দলাল মন্দির। ১৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মহারাজা রঘুনাথ সিংহ দ্বারা নির্মিত কালাচাঁদ মন্দিরটি সম্পূর্ণ মাকড়া পাথরের বাংলা চালার ছাদে একরত্ন বিশিষ্ট মন্দির। মদনমোহন মন্দিরটি ১৬৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মহারাজা দুর্জন সিংহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। ঐতিহ্যমন্ডিত টেরাকোটা মন্দিরগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। মন্দিরের সারা গায়ে খোদিত আছে কৃষ্ণলীলা।১৭২৬ খ্রিষ্টাব্দে মল্লরাজ গোপাল সিংহ তিন তিনটে মাকড়া পাথরের মন্দিরকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন জোড়মন্দির শ্রেণী। মাকড়া পাথরে রামায়ন, মহাভারত ও কৃষ্ণলীলার অপূর্ব চিত্র খোদিত আছে মন্দিরের ভিতরাংশে। “আরও একটা বিষয় তোদের জানিয়ে রাখি।” সিগারেটে একটা টান দিয়ে বড়দা বললো। “বিষ্ণুপুরের উত্তরে বয়ে চলেছে গন্ধেশ্বরী-দ্বারকেশ্বর-বিড়াই প্রভৃতি নদী ও তাদের শাখা নদীগুলি। নদীগুলিকে শুধুমাত্র কৃষি কাজেই ব্যবহার করা হতো না, বানিজ্য ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার যথেষ্ঠ ছিল বলে জানা যায়। জলপথ দিয়ে জৈনধর্ম বিষ্ণুপুরে প্রবেশ করেছিল বলে পন্ডিতগণ মনে করেন এবং তার ফল স্বরূপ ধরাপাটের বিখ্যাত জৈনমন্দির এবং ডিহর জয়পুর সলদা প্রভৃতি স্থানের জৈন মূর্তি ও স্থাপত্য এবং পরবর্তী সময়ে মল্লরাজাদের আমলে মাকড়া পাথর ও পোড়ামাটির তৈরি দুর্গ, মন্দির, সৌধ প্রভৃতি স্থাপত্য গড়ে উঠেছে, যা বর্তমান কালেও মাথা উঁচু করে সেদিনের গৌরবময় অধ্যায়কে মনে করিয়ে দেয়।” পায়ে পায়ে এসে পৌঁছলাম লালবাঁধের ধারে। গাছের তলায় বসে শুরু হল লালবাঁধের গল্প। “মল্লরাজ দ্বিতীয় রঘুনাথ লুন্ঠিত ধনরত্নের সঙ্গে উড়িষ্যার পাঠান সর্দার রহিম খাঁর বেগম লালবাঈকে বিষ্ণুপুরে নিয়ে আসেন। তাকে রাখা হয় রাজ অন্তঃপুরের বাইরে ‘নতুন মহলে’। রানী চন্দ্রপ্রভা রাগে ও অভিমানে লালবাঈকে হত্যা করার আদেশ করেন। রানীর নির্দেশে এই বাঁধেই শিশুপুত্রসহ লালবাঈকে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। শোনা যায় রানী চন্দ্রপ্রভা মহারাজকেও হত্যা করে তাঁর চিতাতেই সতী হন। লালবাঁধের হাওয়ায় আজও ভেসে বেড়ায় লালবাঈয়ের করুন কাহিনী, ভেসে আসে তাঁর সুরেলার কণ্ঠের মিঠে স্বর।” টুরিস্ট-লজের গা ঘেঁষে ডান দিকের লাল কাঁকড়ের রাস্তা ধরে কিছুটা এগোতেই চোখে পড়লো এক বিশালাকৃতির কামান। “এটাকে বলে দলমাদল কামান”, বড়দা বলল। রেলিং দিয়ে ঘেরা বাঁধানো অঙ্গনে আমগাছের তলায় রাখা তেষট্টিটি লোহার আংটা ঢালাই করে সাড়ে বারো ফুট দীর্ঘ ও প্রায় এক ফুট মুখের ব্যাসওলা এই কামানটি গর্জে ছিল বর্গী আক্রমণ থেকে বাংলাকে রক্ষা করার জন্য রাজা গোপাল সিংহের আমলে। ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দে মারাঠা সর্দার ভাস্কর পন্ডিত বাংলা লুঠ করার সময় বিষ্ণুপুরে হানা দিয়েছিলেন। বৃদ্ধ গোপাল সিংহ স্মরণ করলেন মদনমোহনকে। স্বয়ং মদনমোহন নাকি এই কামানটি দেগে তাড়িয়েছিলেন মারাঠি লুঠেরাদের।

আশেপাশের আরো কয়েকটা মন্দির দেখতে দেখতেই শুরু হলো গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। অগত্যা ফিরতি পথে পা বাড়ানো ছাড়া আর উপায় নেই। ফেরার পথে বাবলু একটা প্রশ্ন করলো বড়দাকে। “একটা জিনিস খুব জানতে ইচ্ছে করছে বড়দা। এই যে এতো সব গল্প আপনি আমাদের বললেন, ইতিহাসের বইতে সে সব কখনো দেখিনি, তাহলে আপনি জানলেন কোত্থেকে?” ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি নিয়ে বড়দা বললেন, “কোত্থেকে জানলাম? সে এক মস্ত বই রে ভাই, যার পাতার কোনো শেষ নেই। যত পড়বি ততই জানবি। হেঁয়ালি মনে হচ্ছে না রে? আসলে সেই একরত্তি বয়স থেকে ঘুরে বেড়িয়েছি অজানার খোঁজে। যেখানেই গেছি চেষ্টা করেছি জায়গাটাকে নতুন করে চেনার। শুধুমাত্র চোখ দিয়ে দেখেই ফিরে আসা নয়, বার বার যাওয়া, আরও নতুন কিছু জানা, আরও নতুন কিছু শেখা। বার্ধক্যের ভারে নুইয়ে পড়া দেয়ালের প্রত্যেকটা ইটের গায়ে লেগে থাকা শ্যাওলার গন্ধ আর তাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা ইতিহাসের প্রত্যেকটা অধ্যায় আমায় প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডেকেছে। আমিও ছুটে গেছি সেই অজানা কাহিনীর স্বাদ আস্বাদনের জন্যে। বইয়ের ছাপা অক্ষরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বেড়িয়ে পড়েছি অজানাকে জানার তাগিদে। মানুষের ইতিহাস শুনেছি মানুষের মুখে।”

পথের হদিশ : কলকাতা থেকে ট্রেনে মোটামুটি ঘন্টা চারেকের পথ বিষ্ণুপুর। হাওড়া থেকে পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বা হাওড়া-চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার, শালিমার থেকে আরণ্যক এক্সপ্রেস ধরে বিষ্ণুপুর ষ্টেশন। সড়কপথে কলকাতা থেকে এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বৈদ্যবাটি ক্রসিং, সেখান থেকে বাঁদিকে ঘুরে সিঙ্গুর-নালিকুল-বাসুদেবপুর-তারকেশ্বর-রসুলপুর-আরামবাগ-কোতলপুর হয়ে মোট ১৫১ কিলোমিটার পথ বিষ্ণুপুর।

থাকার ঠিকানা : রাত্রিযাপনের জন্য রয়েছে অসংখ্য বেসরকারি হোটেল/লজ। উদয়ন লজ – ০৩২৪৪ ২৫২২৪৩/২৫৪০৬০, ৯১২৬৩৪১৯২৫, হোটেল হেরিটেজ – ০৩২৪৪ ২৫৪২৯৮/৩৪১৬০১৯৩, হোটেল যুবরাজ – ০৩২৪৪ ২২৭৮৮৫, এছাড়াও আছে WBTDC–র বিষ্ণুপুর টুরিস্ট লজ – ০৩২৪৪ ২৫২০১৩, ৯৭৩২১০০৮৫০।

বিষ্ণুপুর থেকে ঘুরে আসতে পারেন পাচঁমুড়া গ্রাম, যা টেরাকোটার কাজের জন্য বিখ্যাত। সময় থাকলে বেড়িয়ে আসুন ৮২ কিলোমিটার দূরে মুকুটমণিপুর।

News Britant
Author: News Britant

Leave a Comment