



#রায়গঞ্জঃ দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সুভাষগঞ্জের একটি গোডাউন। এবার সেই অব্যবহৃত গোডাউনেই গড়ে ওঠা, একটুকরো বিচিত্র আকৃতির ফাঙ্গাসকে ঘিরে জমে উঠল কৌতূহলী মানুষের ভিড়। সাপের ফনা আকৃতির সেই ছত্রাককে পুজো দিতে সকাল থেকে ভিড় জমাচ্ছেন রায়গঞ্জ ব্লকের সুভাষগঞ্জের বাসিন্দারা। ফুল, মালা পরিয়ে সকাল থেকে চলছে পুজো, পাঠ। গুটি গুটি পায়ে পাড়ার বাসিন্দাদের দেখাদেখি এগিয়ে আসছে এলাকা বাসী, ফলে উপচে পড়ছে ভিড়।
রায়গঞ্জ শহর থেকে খবর পেয়ে আসছেন একেরপর এক কৌতূহলী মানুষ। কি আছে এই অদ্ভুত দর্শন ফাঙ্গাসে, জানতে নিউজ বৃত্তান্তের ক্যামেরা পৌঁছে গিয়েছিল রায়গঞ্জ শহর লাগোয়া সুভাষগঞ্জ গ্রামে। সুভাষগঞ্জের বিবেকানন্দ মোড় থেকে খানিকটা পশ্চিমে এগোতেই চোখে পড়ল কৌতুহলী মানুষের ভিড়। সেখানে বিভিন্ন বয়সের বাসিন্দারা দাঁড়িয়ে মনসা পুজোর আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত। কয়েকজন তো আবার প্রতিবেদককে নিয়ে গেলেন পাশের স্বপ্নে পাওয়া মনসা মন্দির দেখাতে।
যার গোডাউনে এমন সাপের ফনা আকৃতির ছত্রাক তৈরি হয়েছে, সেই হরি সরকার বলেন, ‘এই গোডাউনটা দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। গত ১৪ই ফেব্রুয়ারী, সোমবার গোডাউন পরিস্কার করতে গিয়ে দেখি সাপ আকৃতির একটি মূর্তি। প্রথমে সাপ ভাবলেও পরে বুঝতে পারি, এটা একটা পাথরের মতন। স্থানীয় গ্রামবাসী এগিয়ে এসে পুজোর প্রস্তাব দেন। আমাদের এই নাগভিটায় প্রচুর সাপ আছে। তাই পরদিন থেকেই শুরু হয়েছে পুজো। আসন্ন শিবরাত্রিতে বড় করে পুজো করে প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
সুভাষগঞ্জে এসেছিলেন বিশিষ্ট পরিবেশ চিন্তক গনেশ সরকার। তিনি এসে ওই ফনা তোলা আকৃতির ফাঙ্গাস দেখে ফটো তুলে বিভিন্ন ভুগোলবিদ ও পরিবেশ কর্মীদের ডাক দেন। তিনি বলেন, বিষয়টি সন্দেহজনক। জিনিসটি সঠিক কি জিনিস, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আমার মনে। পাথরের মতন মনে হওয়ায় সাথে সাথে ভুগোলের শিক্ষকদেরকে জানাই। তারা সকলেই বলেন, এটা আর যাই হোক, পাথরের সাপের মূর্তি নয়।’
এই পরিস্থিতিতে ময়দানে নামে পশ্চিম বঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। তারা এসে কথা বলেন বাড়ির মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে। এরপর এদিন বিজ্ঞান মঞ্চেের পক্ষে তাপস জোয়ারদার বলেন, আমরা বিজ্ঞান মঞ্চের বিজ্ঞান কর্মীরা ওই বাড়িতে যাই। পরিবারের সকলের থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। ওই সাপ আকৃতির মূর্তিটি আসলে একপ্রকার ছত্রাক। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত কোনো জায়গায়, গাছ বা কাঠের গুড়িকে কেন্দ্র করে এই প্রকার ছত্রাক গড়ে ওঠে। এই ছত্রাকটির নাম Polyporus (Basidiomycetes)।
আমাদের জেলাতেও এর আগে এমন বহু ছত্রাক গড়ে ওঠার ঘটনা সামনে এসেছে। এই ছত্রাকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, এর একপ্রান্ত চকচকে হলেও, অপরপ্রান্ত সাদা হয়। চোপড়া ব্লকে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ওদেরকে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছি। তবে আগামী দিনে কুসংস্কার দূর করতে সচেতনতা মূলক প্রচারাভিযান চালিয়ে যেতে হবে।’ বিজ্ঞান কর্মী অনিরূদ্ধ সিনহা বলেন, এই ছত্রাক গুলো গাছের গুড়ি থেকে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য রস সংগ্রহ করে। এরা সাধারণত চা বাগান অঞ্চলের আর্দ্র জলবায়ুতে বেশি তৈরি হয়। এখানেও সেই ঘটনা ঘটেছে।
আমরা এর সত্য উদঘাটন করতে বিজ্ঞান কর্মীরা সকলে যাই এবং এর সমাধান করি। সত্য উদঘাটন হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন, স্থানীয় বাসিন্দা তথা শিক্ষক সুকুমার ঘোষ। তিনি বলেন, বিজ্ঞান মঞ্চ এভাবে সত্য ঘটনা সামনে তুলে নিয়ে আসায় অনেকের মনের কুসংস্কার দূর হল।
