




স্থান- রায়গঞ্জ হাসপাতালের গা ঘেঁষে চলে যাওয়া ব্যস্তসমস্ত লম্বা রাস্তা।
পোশাকি নাম- ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় সরণি। যে রাস্তাটি বিদ্রোহী মোর থেকে শুরু করে স্টেট বাস স্ট্যান্ড, হাসপাতালের দুটো মেইন গেটের সামনে দিয়ে গিয়ে, পলিটেকনিক কলেজ, রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ পাড়া মোড় হয়ে সোজা মিশে গেছে এন এস থার্টি ফোর এ। স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সরণি।
আজকের মেডিকেল কলেজ তৈরি হয়নি তখনো। ছোটখাটো জেলা হাসপাতাল। ছোট হলেও লোকজনের আনাগোনা নেহাত কম ছিল না। জেলার মানুষজন তো আসতেনই; থাকতেন আশপাশের অঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যের লোকজনও। বিশেষত যখন হাসপাতালের আউটডোর খোলা থাকে তখন দেহাতি মানুষের ভিড়ে রাস্তা গমগম করে। হাসপাতালে লাগোয়া রাস্তায় বিক্ষিপ্তভাবে কিছু দোকানপাট তখনও ছিল। হাসপাতালে সীমানা প্রাচীর ছিলনা। তাই ফাঁকফোকর দিয়ে দিব্যি যাতায়াত করা যেত হাসপাতাল থেকে রাস্তায়।
বেশ কয়েক বছর আগে এমনি এক দুপুরে আউটডোর চলাকালীন সময় হঠাৎ প্রচন্ড একটি শব্দ আর মানুষজনের হইচই শুনে প্রাচীরের ফাঁক গলিয়ে রাস্তায় এসে দেখি একটি পন্যবাহী ট্রাক এক সাইকেল-আরোহীকে পিষে দিয়ে চলে গেছে। থেঁতলে যাওয়া দেহে তখনো প্রাণের স্পন্দন ছিল। পথচলতি মানুষজন আর স্থানীয়দের সহায়তায় মৃতপ্রায় কিশোরীকে পাঠানো গেল সংলগ্ন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে। চেষ্টা কিছু হ’ল বটে কিন্তু চিকিৎসক হিসেবে বুঝতে পারছিলাম কোনমতেই বাঁচানো যাবেনা মেয়েটিকে।
সুভাষগঞ্জ এর মেয়ে। পড়তে এসেছিল টাউনে। টাউন থেকে তার আর ফেরা হলো না গ্রামের বাড়িতে। অথচ এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না! ওই সময় তো এভাবে ট্রাক শহরের রাস্তায় আসার কথা নয়! কারো না কারো গাফিলতিতেই নীতিবিরুদ্ধ কাজটি হয়েছে। যার খেসারত দিতে হ’ল নিষ্পাপ ওই কিশোরীকে। সে সময়ে কথা চালাচালি কম হয়নি।
তারপর এই রাস্তা দিয়ে অনেক কাহিনী গড়িয়েছে। ঝাঁ-চকচকে দশতলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল পরিণত হয়েছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসক ছাড়াও ডাক্তারি পড়ুয়ারা যাতায়াত শুরু করেছেন। শুধুমাত্র হাসপাতালেই কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেড়ে গেছে।
সীমানা প্রাচীর তৈরি হবার পর তার গা ঘেঁসে অসংখ্য দোকানপাট গজিয়েছে এবং একটি হাসপাতাল কে কেন্দ্র করে যেসব আনুষঙ্গিক পরিষেবা কেন্দ্র (যেমন ওষুধের দোকান, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, খাবার-দাবারের দোকানপাট ইত্যাদি)র সংখ্যায় বেড়েছে কয়েকগুণ। রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে উন্নীত হয়েছে। স্বভাবতই জনবহুলতর হয়েছে এই অঞ্চল। প্রয়োজন হয়েছে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও পথচারীদের নিরাপত্তার তাগিদ।
কিন্তু এই অঞ্চলের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ বা শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এখনও কোনো কার্যকরী প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত ছোটখাট দুর্ঘটনা লেগেই থাকছে। পথচারী সাধারণ মানুষ, হাসপাতালে আসা রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়-স্বজন প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত থাকছেন।কালে ভদ্রে দুই একদিন সিভিকদের দেখা মিললেও প্রয়োজনের নিরিখে তা’ অপ্রতুল এবং অনিয়মিত বলেই মনে হয়।এবং আতঙ্কের যথাযথ কারণও যে আছে প্রশাসনের যে কেউ যে কোন দিন এখানে এলেই তা’ টের পাবেন।
আমরা কি পারিনা এই অঞ্চলের সমস্যার দিকে একটু প্রশাসনিক নজর দিতে যাতে একটু নিরাপদে যাতায়াত করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করা যায়? নইলে আবার হয়তো কোনো দিন প্রাণঘাতী আতঙ্কের সাক্ষী সাক্ষী থাকতে হবে আমাদের। সেই দৃশ্য একেবারেই সুখকর হবেনা।
