



১১ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা নিহত: ইউক্রেন॥ ইউক্রেনে ২ হাজার ২ শতাধিক সামরিক স্থাপনা ধ্বংস: রাশিয়া॥ জেলেনস্কির নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান মার্কিন প্রশাসনের॥ পুতিনকে পরাজিত করতে জনসনের ৬ দফা পরিকল্পনা॥ ইউক্রেনে সোভিয়েত আমলের যুদ্ধবিমান পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র-পোল্যান্ড।
#হাবিবুর রহমান, ঢাকা: ইউক্রেনের মনোবল ভাঙতেই চলমান সামরিক অভিযানে দেশটির শহর ও জনবহুল এলাকাগুলোতে ব্যাপক বোমা বর্ষণ করছে রাশিয়া। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে বলে রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তবে ইউক্রেন দাবী করেছে ১১ হাজারেরও বেশি রুশ সেনাকে হত্যা করা হয়েছে। রাশিয়া দাবি করেছে ইউক্রেনে ২ হাজার ২ শতাধিক সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। জেলেনস্কির নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে মার্কিন প্রশাসন। পুতিনকে পরাজিত করতে জনসন ৬ দফা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। অপরদিকে ইউক্রেনে সোভিয়েত আমলের যুদ্ধবিমান পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র-পোল্যান্ড। জানা গেছে, ইউক্রেনের মারিউপোলে নির্বিচারে চলছে গুলি। থেকে থেকে হচ্ছে বিস্ফোরণ। কেঁপে উঠছে ইউক্রেনের মাটি। মুহূর্তে তছনছ হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি। চোখের সামনে পুড়ছে সব। কান্নার রোল চারদিকে। ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে ধ্বনিত হচ্ছে চিৎকার। কেউ কেউ প্রতিরোধে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
তাদের হাতে হাতে অস্ত্র। বেশিরভাগই প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াচ্ছে দিগি¦দিক। আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের কর্মীরা মারিউপোলের পরিস্থিতিকে ‘বেদনাদায়ক’ বলে বর্ণনা করেছেন। ছবি ও ভিডিওতে মারিউপোলের করুণ চিত্র দেখা গেছে। জীবন নিয়ে পালাচ্ছে উ™£ান্ত মানুষ। তাদের এক হাতে ব্যাগ, এক হাতে শিশু-কোলে ও কাঁধে। শিশুর মলিন চোখে ক্যামেরার চোখ পড়লেই ফুটে উঠছে জিজ্ঞাসা-কেন এই যুদ্ধ? তবু যুদ্ধ চলছে। রাশিয়ার পরাক্রমী বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের প্রাণকেন্দ্রে প্রতিরোধ দুর্গ গড়ে তুলেছে দেশটির যোদ্ধারা। রোববার ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ১১তম দিন ছিল। যুদ্ধের বর্বরতা আর বারুদের গন্ধ চারদিকে। ইউক্রেনের দাবি, যুদ্ধ শুরুর পর অন্তত ১০ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছেন। তাছাড়া ২৬৯টি ট্যাংক, ৪০টি হেলিকপ্টার, ৫০টি এমএলআরএসসহ রাশিয়ার বহু অস্ত্র ও সরঞ্জাম তারা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। ইউক্রেনের মারিউপোল ও ভলোনোভাখায় টলমল যুদ্ধবিরতির মধ্যে চলেছে রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার তৎপরতা। তাতে পদে পদে বাধা আর মৃত্যুঝুঁকি। মরছেও অনেকে। মারিউপোল ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী। শহরটিতে কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি ছিল। বেসামরিক মানুষকে সরে যাওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে ‘মানবিক পথ’। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। পাল্টা অভিযোগে মস্কো বলেছে, উগ্র জাতীয়তাবাদীরা সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য আটকে রেখেছে। এরপর মারিউপোল শহরে নতুন করে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। মারিউপোলের সিটি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। মারিউপোলের সিটি কাউন্সিলের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে।
বেসামরিক বাসিন্দারা এই সময় শহর ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। মারিউপোলের শহর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যারা ব্যক্তিগত গাড়িতে যাবেন, তারা যেন রেডক্রসের বাসের পেছনে পেছনে থাকেন। এছাড়া গণপরিবহণে গাড়ির সক্ষমতার সবটুকু ব্যবহার করে যাত্রী নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। জানা গেছে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল আজ সোমবার তৃতীয় দফায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। ইউক্রেনে রক্তাক্ত সংঘর্ষ অবসানের লক্ষ্যে এর আগে বেলারুশে উভয়পক্ষ আরো দুদুফা বৈঠক করেছে। ইউক্রেনের আলোচক ডেভিড আরাখামিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কির দলের পার্লামেন্টারি নেতা এবং প্রতিনিধি দলের সদস্য আরাখামিয়া তার ফেজবুক পেজে বলেন, আজ সোমবার তৃতীয় দফার বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রোববার প্রকাশ করা দৈনিক গোয়েন্দা রিপোর্টে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার সর্বাত্মক সামরিক অভিযানের মুখে ইউক্রেনের প্রতিরোধ মস্কোকে বিস্মিত করা অব্যাহত রেখেছে। আর এই কারণেই খারকিভ, চেরনিহিভ ও মারিউপলসহ অন্য শহরগুলোকে লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী।
এই প্রতিবেদনে ২০১৬ সালে সিরিয়া এবং ১৯৯৯ সালে চেচনিয়াতে রুশ সামরিক কৌশলের সঙ্গে ইউক্রেনে চলমান অভিযানে মস্কোর কৌশলেরও তুলনা করা হয়েছে। ইউক্রেনের মতো সিরিয়া এবং চেচনিয়াতেও রুশ সামরিক বাহিনী ভবন ও ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ করেছিল। এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১১ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। আগের দিনগত শনিবারের বিবৃতিতে ১০ হাজারের অধিক রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে গত ১১ দিনের অভিযানে কত সংখ্যক ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে, সে বিষয়ে বিবৃতিতে কোনো তথ্য দেয়নি মন্ত্রণালয়।
অপরদিকে, গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ জানান, ইউক্রেনে সর্বমোট ২ হাজার ২০৩টি সামরিক স্থাপণা ধ্বংস করা হয়েছে। এসবের মধ্যে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ৭৬টি কমান্ড পোস্ট ও কমিউনিকেশন সেন্টার, ১১১টি অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইল সিস্টেম ও ৭১ টি রাডার সিস্টেম, ৯৩ টি যুদ্ধ বিমান, ৭৭৮টি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান, ৭৭টি মাল্টিপল রকেট লাঞ্চার, ২৭৯টি মর্টার, ৫৫৩টি বিশেষ সামরিক যান ও ৬২টি ড্রোন উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ইউক্রেনের প্রিইউৎনয়, জাভিত্নে-বাঝান্নে, স্তারোমলিয়ানোভকা, অক্তায়াব্রসকোয়ি, নোভোমায়াস্কয়ি শহরের সেনা নিবাস ও সেনা ছাউনি থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের হটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর এই মুখপাত্র।
অপরদিকে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির যে প্রস্তাব জেলেনস্কি দিয়েছিলেন, তা প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন। এ সম্পর্কে এএফপিকে ওই কর্মকর্তা বলেন, করোনা মহামারির কারণে দুই বছর প্রায় স্থবির অবস্থায় ছিল দেশের অর্থনীতি। এর ফলে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফিতীতে বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছে মার্কিন জনগণ। তাই এখন তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তা মার্কিন জনগণের ওপর সীমাহীন চাপ সৃষ্টি করবে। গত শনিবার টেলিফোনে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি। এই ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা আগে মার্কিন আইন প্রণেতাদের উদ্দেশে একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছিলেন জেলেনস্কি। সেখানে তিনি রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে আইন প্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। ইউক্রেনে হামলার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ভিসা ও মাস্টারকার্ড মস্কো থেকে তাদের ব্যাবসা গোটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে— ফোনালাপে এই বিষয়টিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট গুরুত্ব দেন বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের আইন প্রণেতারা ইউক্রেনে ১০ বিলিয়ন ডলার পাঠানোর ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। গত সপ্তাহেই ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর জন্য ৩৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে এএফপিকে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এর আগে এক সঙ্গে এত অর্থ কোনো দেশকে সহায়তা হিসেবে পাঠানো হয়নি।’
এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক সামরিক অভিযান গড়িয়েছে একাদশ দিনে। রুশ সামরিক বাহিনীর ব্যাপক হামলার মুখে অনেকটাই বিপর্যস্ত পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে ইউক্রেনে সোভিয়েত আমলের যুদ্ধবিমান পাঠানোর কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র-পোল্যান্ড। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনে সেনা না পাঠালেও সহায়তা করতে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় এই পরিকল্পনা করছে দেশ দু’টি। পোল্যান্ডের সঙ্গে একটি চুক্তির বিষয়ে বিবেচনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা, যার মাধ্যমে সোভিয়েত আমলের কিছু যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে দেবে পোল্যান্ড। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র পোল্যান্ডকে অত্যাধুনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের ৩০০ জনের বেশি সিনেটরের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কির বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, তার দেশের জরুরি ভিত্তিতে এখন অনেক যুদ্ধবিমানের দরকার। হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে পোলিশদের সঙ্গে কাজ করছি এবং সামরিক জোট ন্যাটোর অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও কথা বলছি।’
অবশ্য পোল্যান্ড যদি ইউক্রেনকে বিমান সরবরাহ করে, সেটি পূরণে যুক্তরাষ্ট্র ঠিক কি করবে, তা নিয়েই বিশেষ করে আলোচনা চলছে। ইউক্রেনের পাইলটদের বিশেষ করে রাশিয়ার তৈরি যুদ্ধবিমান দরকার। কারণ তারা এ ধরনের বিমান চালনায় প্রশিক্ষিত। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রায় আধাঘণ্টার ওই ফোনালাপে তিনি ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা, মানবিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন। এছাড়া অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দের জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক অভিযান শুরু হয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চলল। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ আক্রমণের প্রায় প্রথম থেকে মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো। অবশ্য আক্রমণ থেকে রাশিয়া যে পিছু হটেছে তা বলা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পরাজিত করতে ছয় দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। একইসঙ্গে ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয় নিশ্চিত করতে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়তে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘ভয়াবহ আক্রমণ’ ব্যর্থ করার জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর চাপ বাড়াতেই এই ছয় দফা পরিকল্পনা তৈরি করেছেন বরিস জনসন। এই ছয় দফা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে-এক. বিশ্ব নেতাদের ইউক্রেনের জন্য একটি ‘আন্তর্জাতিক মানবিক জোট’ গঠন করতে হবে। দুই. ‘নিজেদের আত্মরক্ষার জন্যই’ তাদের (দেশগুলোর) উচিত ইউক্রেনকে সমর্থন করা। তিন. রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে হবে। চার. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান কর্মকাণ্ডকে প্রতিরোধ করতে হবে। পাঁচ. যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক সমাধানের পথ অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এবং সেটি হতে হবে কেবল ইউক্রেনের বৈধ সরকারের পূর্ণ অংশগ্রহণের মাধ্যমই। ছয়. সামরিক জোট ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ‘নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা’ আরও জোরদার করার জন্য একটি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিবিসি বলছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটে সোমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জান্টিন ট্রুডো এবং ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠক করবেন বরিস জনসন। বিশ্ব রাজনীতির উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে কানাডীয় ও ডাচ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বরিস জনসন তার বার্তা পৌঁছে দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে ঢুকে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো। সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহর কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। সামরিক অবকাঠামোর বাইরে রাশিয়ার হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে আবাসিক ভবন, স্কুল ও হাসপাতাল। আর তাই জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়। ইউক্রেনে রুশ এই সামরিক উপস্থিতিকে মস্কো হামলা বা যুদ্ধ না বলে শুরু থেকে ‘বিশেষ অভিযান’ বলে দাবি করে আসছে। যদিও রুশ সেনারা ইউক্রেনের সামরিক-বেসামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জবাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার খড়গ আরোপ অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমা দেশগুলো।
