



#মালবাজার: সেভকের করোনেশন সেতু এক ঐতিহ্য ও ইতিহাস। পর্যটনের স্বার্থে এই সেতুর সংরক্ষণ ও শিলিগুড়ির সাথে ডুয়ার্সের যোগাযোগ নিবিড় করতে তিস্তার উপর দ্বিতীয় এক সেতু আবশ্যিক হয়েছে পড়েছে। যদিও খবরে জানাগেছে, ইতিমধ্যেই প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। সেতু নকশা তৈরির কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় সেতুর দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে ডুয়ার্স ফোরাম ফর সোশ্যাল রিফর্মের কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন হলেই দেখা করে দাবি জানাবেন।
এবার আসি করোনেশন সেতুর ইতিহাস নিয়ে। ১৮৫৮ সালে ডুয়ার্সে গজালডোবায় প্রথম চাবাগান গড়ে ওঠা শুরু হয়। ১৮৭৭ সালে চা উৎপাদন শুরু হয়। তারপর ৪০ বছরের মধ্যে তিস্তার পার থেকে সংকোশ নদী পর্যন্ত শতাধিক চাবাগান গড়ে ওঠে। চাবাগানের পন্য আদান প্রদানের জন্য তৈরি হতে শুরু করে রাস্তা বিভিন্ন নদী ও ঝোড়ার উপর কালভার্ট। সমস্যা দেখা দেয় দ্রুত দার্জিলিংয়ের সংগে যোগাযোগ রাখার ক্ষেত্রে। তখনকার দিনে আজকের শিলিগুড়ি ছিল না। চিকিৎসা, শিক্ষা, চাবাগানের সমস্যা সব কিছুর জন্য চা করদের ছুটতে দার্জিলিংয়ে। তিস্তা পার হতে ভরসা বলতে ফুলবাড়ি ঘাট। সেখান দিয়ে তিস্তা পেরিয়ে শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং যেতে হতো।
মালবাজার শহরের ব্যবসায়ী প্রয়াত অগ্নিদয়াল সিংয়ের পুর্বপুরুষ এই ঘাটের ইজারাদার ছিলেন। ১৯২৫ সাল নাগাদ ডুয়ার্সে চায়ের উৎপাদন বাড়ে। গড়ে ওঠে দ্বিশতাধিক চাবাগান। স্বাভাবিক ভাবে ভিষণ দরকার হয় তিস্তার উপর সেতু নির্মাণের। এই চাহিদা থেকে শুরু হয় সেতু তৈরির প্রচেষ্টা। তার আগেই অবশ্য তিস্তার পার বরাবর শিলিগুড়ি থেকে গেলিখোলা পর্যন্ত নেরো গেজের রেললাইন তৈরি হয়েছিল। সেই রেলপথে মালপত্র এনে ১৯৩৭ সালে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ১৯৪২ সাল থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এই সেতুর মাধ্যমে ডুয়ার্সের সাথে দার্জিলিং, কালিম্পং ও শিলিগুড়ির যোগাযোগ সহজ হয়।
সেই সময় যানবাহনের বহন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৫টন। তারপর গড়িয়ে গেছে ৮৩ বছর। বয়েসের ভারে এই সেতু অনেকটাই ভারাক্রান্ত। ইতিমধ্যে ভুমিকম্প ও তিস্তার জলচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেতু। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। এ ছারাও পাহাড়ি পথে মাঝেমধ্যে ধস পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। যোগাযোগের মাধ্যম ছারাও সেভকের নৈসর্গিক সৌন্দর্য, কালিবাড়ি ও অন্যান্য দেখার জন্য বহু পর্যটক ও মানুষ ঘুরতে আসেন। করনেশন সেতু তাদের কাছে এক দ্রষ্টব্য স্থান। এই কারনে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও পর্যটনের বিকাশের জন্য দ্বিতীয় এক সেতু অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
