News Britant

ঘুরে আসুন বজ্র ড্রাগনের দেশ থেকে

Listen

( খবর টি শোনার জন্য ক্লিক করুন )

কৌশিক চট্টোপাধ্যায় : মেঘে ঢাকা ধ্যানমগ্ন হিমালয় আর নীল আকাশের নিচে সবুজে ঘেরা এক রূপকথার রাজার দেশের নাম ভুটান। গ্রীষ্মের প্যাচপেচে গরমে বাঙালির বরাবরের ডেস্টিনেসন যখন হয় দার্জিলিং বা সিকিম পাহাড়, তখন সামান্য একটু বেশি খরচে আপনি অনায়েসেই ঘুরে আসতে পারেন আগুনমুখো বজ্র ড্রাগনের দেশ থেকে। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় এক সময় প্রকৃতি রুষ্ট হলে কালো আকাশ থেকে বজ্র বিদ্যুৎ ড্রাগনের মতোই নেমে আসতো ভুটানের পাহাড়ি গ্রাম গুলিতে আর মুহুর্তেই আগুনের লেলিহান শিখায় হারিয়ে যেতো সহস্র প্রাণ। সেই থেকে অদেখা ড্রাগনের হাত থেকে দেশ ও দেশবাসীকে রক্ষা করার জন্য ড্রাগনের পূজা করে আসছে ভুটান বাসীরা আর তার থেকেই ভুটানের নাম হয়েছে ‘ড্রুক ইউল’ অর্থাৎ ‘ল্যান্ড অফ থান্ডার ড্রাগন’। গোটা দেশের জনসংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ্য ৯৮ হাজারের কাছাকাছি। সারা পৃথিবীতে মুষ্টিমেয় যে কয়েকটি দেশে রাজতন্ত্র আছে তার মধ্যে ভুটান অন্যতম। ভুটানের বর্তমান রাজা জিগমি কেসর নামগেইল ২০০৬ সালে রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ভুটানের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সাধারণ মানুষের প্রতিদিনকার নিয়মানুবর্তিতা আপনাকে অবাক করবেই। 

কিভাবে যাবেনভুটান বিদেশ হলেও এখানে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট বা ভিসার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে ইন্টারনাল ট্যুরিস্ট পারমিশনের প্রয়োজন হয় । কোলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে যে কোনদিন ১৩১৪৯ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরে পৌঁছে যান ভুটানের সবচেয়ে কাছের স্টেশন হাসিমারাতে। প্রতিদিন ৮:৩০ মিনিটে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস শিয়ালদহ থেকে ছেড়ে পরদিন ১০:৪৬ মিনিটে হাসিমারা স্টেশনে পৌঁছায়। সেখান থেকে ছোট গাড়ি বা অটোতে করে আধঘণ্টার পথ পেরিয়ে জয়গাঁও। প্রয়োজনে জয়গাঁওতে ভুটান বর্ডারের কাছেপিঠের হোটেলে একরাত্রি থেকে যান। ভুটানের গেট পেরিয়ে ওপারে গিয়ে ইমিগ্রেশন অফিস থেকে সর্বোচ্চ সাত দিনের অনুমতিপত্র সংগ্রহ করে রওনা দিতে পারেন রাজধানী থিম্পু বা পারোর দিকে। ফুন্টশিলিঙের ইমিগ্রেশন অফিস থেকে কেবল মাত্র থিম্পু এবং পারোর পারমিট দেওয়া হয়। এই পারমিশন বের করতে সব মিলিয়ে প্রায় ঘন্টা তিনেক সময় লেগে যায় তাই সকাল সকাল লাইন দেওয়াই ভালো। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঘুরতে হলে ফুন্টশিলিঙ বাস স্ট্যাণ্ডের আর.এস .টি.এ অফিস থেকে কার পারমিট নিতে হবে আপনাকে। প্রতিদিন তিনটে পর্যন্ত এই অফিস থেকে থিম্পু এবং পারো যাওয়ার জন্য গাড়ির পারমিট দেওয়া হয়। তাই ইমিগ্রেশন অফিস থেকে ট্যুরিস্ট পারমিট বের করেই গাড়ি পারমিট নিয়ে নিন। ভারত ভুটান বর্ডার শহর জয়গাঁতে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে প্রয়োজনে তাদের ট্রাভেল প্যাকেজ নিয়ে নিলে কোন চিন্তাই করতে হবেনা আপনাকে। তবে ভুটানে প্রবেশের জন্য ট্যুরিস্ট পারমিশন পেতে হলে আপনার সচিত্র পরিচয়পত্র (পাসপোর্ট অথবা ভোটার আই কার্ড), এবং দুই কপি ছবির প্রয়োজন। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জন্মের পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট  আধার কার্ডের যেকোনো একটির সাথে দুই কপি ছবি লাগবে। ফুন্টশিলিঙ থেকে পারো বা থিম্পু যাওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থাও আছে। প্রয়োজনে ছয় সাত ঘন্টার পাহাড়ি পথ পেরিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন থিম্পু বা পারোর দিকে। আকাশ পথে ভুটান যেতে হলে কলকাতা থেকে ড্রুক এয়ারওয়েজের বিমানে করে পারো যেতে হবে। 

পারো : ভুটানের রাজধানী থিম্পু হলেও পর্যটকদের মতে পারো ভুটানের সবচেয়ে সুন্দর এলাকা। বর্ডার  এলাকা ফুন্টশিলিঙ থেকে পারোর দুরত্ব প্রায় ১৫৯ কিলোমিটার। থিম্পু হাইওয়ে ধরে পারো যেতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা। থিম্পু হাইওয়ের ছুজম এলাকা থেকে থিম্পু আর পারোর রাস্তা আলাদা হয়ে গেছে। ছুজম থেকে বাঁদিকে ঘুরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ পেরোলেই পাহাড়ি উপত্যকা শহর পারো। পারো নদী আর আপেল বাগানে ঘেরা ঝকঝকে শহরে দু-তিন দিনের সফর আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে আপনার।

কি দেখবেন –  পারোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান তাকসাং মনাস্ট্রি বা টাইগার নেস্ট। শহরের খুব কাছেই আপেল বাগানের মধ্য দিয়ে গাড়ি করে সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন তাকসাং মনাস্ট্রির নিচে। এখান থেকে প্রায় ৯০০ মিটার খাড়া পাহাড়ি পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয় টাইগার নেস্ট বা তাকসাং মনাস্ট্রিতে। মনাস্ট্রিতে না উঠতে পারলেও নিচের পরিবেশ আপনার মন ভরিয়ে দেবে। এরপরে যেতে পারেন রিমপুং জং, গোলাকার নজরমিনার তা জং, কিচু গুম্ফা, যাদুঘর বা সংগ্রহশালা দেখে কাছের ভিউ পয়েন্ট থেকে পারো শহরের অপরূপ দৃশ্য দেখতে কখনোই ভুলবেন না।  

কোথায় থাকবেন – পারো শহরে ছোট বড় অসংখ্য হোটেল রয়েছে। তার মধ্যে হোটেল ফেনদে গাখিল (১৮০০-২০০০ প্রতিদিন) ফোন – ০০৯৭৫৮২৭১১২৬, হোটেল ড্রাগন (১৭০০- ২০০০), রিমা রিসোর্ট ( ২৫০০-৩৫০০) ফোন – ৯৪৩৩৩০৫৭২৬

থিম্পু : পারোতে দু তিনদিন কাটিয়ে চলে আসুন থিম্পুতে। পারোর মতো থিম্পু শহরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আপনাকে মুগ্ধ করবে। সম্ভব হলে একটা গাইড সাথে নিয়ে একদিনেই ঘুরে নিতে পারেন থিম্পুর দ্রষ্টব্য স্থানগুলি। 

কিভাবে যাবেন – ফুন্টশিলিঙ থেকে থিম্পুর দূরত্ব প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার এবং পারো থেকে ৬৫ কিলোমিটার। পারো থেকে দুই ঘন্টার পথ পেরিয়ে অনায়েসে চলে আসতে পারেন থিম্পুতে। 

কি দেখবেন – তাসি চো জং, ঘুরে আসতে পারেন বিশালাকার বৌদ্ধ মন্দির থেকে। পাহাড়ের মাথায়  প্রায় দুইতলা বাড়ির সমান গৌতম বুদ্ধের মন্দির। মন্দিরের ওপর থেকে নীচের দৃশ্য এক কথায় অসাধারণ। এরপর যেতে পারেন চিড়িয়াখানা, চোর্তেন এবং আপেল বাগান দেখতে।

কোথায় থাকবেন – থিম্পু শহরে ছোট বড় অসংখ্য হোটেল রয়েছে। তার মধ্যে হোটেল ৮৯ ( ভাড়া – ২৫০০- ৩০০০) ফোন + ৯৭৫২৩২২৯৩১, থিম্পু টাওয়ার হোটেল ( ৫০০০- ৭০০০) ফোন +৯৭৫১৭১১০৯৮৮, হোটেল রাভেন ইন ( ভাড়া ২৫০০- ৩০০০) ফোন – ৯৪৩৩৩০৫৭২৬ 

পুনাখা থিম্পু থেকে মাত্র ৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাহাড়ি গ্রাম পুনাখা। এখানে এলে মনে হয় প্রকৃতি দেবী যেন তার কল্পনার রূপভূমিকে বাস্তবের মাটিতে সাজিয়েছেন একটু একটু করে। 

কিভাবে যাবেন – পুনাখা যেতে গেলে থিম্পু থেকে RAP অর্থাৎ রেস্ট্রিকটেড এরিয়া পারমিট নিতে হয়। তবে শনিবার ও রবিবার এই পারমিট অফিস বন্ধ থাকে তাই পুনাখা যেতে গেলে এই পারমিট আগেই বের করে রাখা দরকার। থিম্পু থেকে দাওয়া পরিবহণের বাসে করে অথবা গাড়ি ভাড়া করে একই দিনে পুনাখা ঘুড়ে থিম্পুতে ফিরে আসতে পারেন। 

কোথায় থাকবেন – জাংথোপেলরি রিসোর্ট ( ভাড়া ২০০০-২৫০০); ডামচেন রিসোর্ট  ( ভাড়া ২৫০০-৩০০০); ফোন – ০৩৩ ২৩৬০৭২৯৩  অথবা থিম্পু থেকেও বুক করতে পারেন।

জরুরি টিপস বাড়িথেকে বেরোনোর আগে পাসপোর্ট বা ভোটার কার্ড অরিজিনাল আর বাচ্চার আধার কার্ড বা জন্ম শংসাপত্র জেরক্স নিয়ে নিন। । সকলের চার কপি ছবি নিন। পারমিট দেখিয়ে স্বল্প খরচে ভুটানে ব্যবহারের জন্য মোবাইলের সিমকার্ড নিয়ে নিতে পারেন ।  ভুটান বর্ডার পেরোলেই ঘড়ির কাঁটা আধঘণ্টা এগিয়ে নিন আর এগিয়ে চলুন বজ্র ড্রাগনের দেশে ।

News Britant
Author: News Britant

Leave a Comment