



#হাবিবুর রহমান, ঢাকা: চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরে সেখানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু এবং আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করছি। গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো-সামগ্রিকভাবে আমাদের জনগণের উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনীতির উন্নয়ন। এই ইস্যুতে আমি মনে করি আমাদের ২টি দেশ একসঙ্গে কাজ করছে। এতে শুধু ভারত ও বাংলাদেশের মানুষই নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ উন্নত জীবন পেতে পারে। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
রাষ্ট্রপতি ভবনে তিনি আরও বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধু। আমি যখনই ভারতে আসি, এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের, বিশেষ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদানের কথা আমরা সবসময় স্মরণ করি। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করছি।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি এটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হবে এবং আমাদের মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন করা এবং আমাদের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা-যা আমরা করতে সক্ষম হবো। বন্ধুত্বের মাধ্যমে আপনি যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেন। সুতরাং, আমরা সবসময় এটিই করি।’
এর আগে মঙ্গলবার সকালে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছান শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর ভারতীয় নেতৃবৃন্দ এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পরিচয় করিয়ে দেন মোদি। সোমবার নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর পরপরই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এসময় তারা বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। পরে দিল্লির নিজামুদ্দিন আউলিয়া দরগাহও পরিদর্শন করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে, ভারত ও বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তব ফলাফল অর্জন করেছে। এর মধ্যে ভূমি ও সমুদ্রসীমার সীমানা নির্ধারণ, নিরাপত্তা, যোগাযোগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, সামুদ্রিক অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করতে ভারত অনেক কিছু করতে পারে।একইসঙ্গে উভয় দেশ আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে যৌথভাবে কাজ করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সোবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়কালে শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে ভারত কী ভূমিকা নিতে পারে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত একটি বড় দেশ। তারা অনেক কিছুই করতে পারে।’
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আন্তঃসীমান্ত নদীগুলো যাতে পুনরুজ্জীবিত করা যায় তার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, নদীগুলো ড্রেজিং করলে এর প্রবাহ উন্নত হবে। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বৈঠকের আশা করেছিলেন, কিন্তু তা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (মমতা) আমার বোনের মতো, আমি যখনই চাই তার সঙ্গে দেখা করতে পারি। আমাদের সবসময় ভালো সম্পর্ক ছিল।’
এদিকে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ভারতীয় এই ধনকুবের বলেন, ‘দিল্লিতে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা সম্মানের বিষয়। বাংলাদেশের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুপ্রেরণামূলক এবং অত্যাশ্চর্যভাবে সাহসী। আমরা আমাদের ১৬০০ মেগাওয়াট গোড্ডা পাওয়ার প্রজেক্ট চালু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ সোমবার রাষ্ট্রীয় সফরের প্রথম দিনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।এর আগে সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪০মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এসময় প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ এবং দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান স্বাগত জানান। করোনা মহামারির পর প্রথমবারের মতো ভারতে শেখ হাসিনার এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
প্রধানমন্ত্রীর চারদিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরে ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্বালানি, অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টন ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা আলোচ্যসূচির শীর্ষে রয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া সফরের এজেন্ডার শীর্ষে উভয় দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও উন্নত করা, আঞ্চলিক সংযোগের উদ্যোগ সম্প্রসারণ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টিও রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও এই সফরে ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা।
