News Britant

বাংলাদেশে অনুশোচনায় সারাজীবনে বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণের টাকা শোধ করলেন বৃদ্ধ

Listen

( খবর টি শোনার জন্য ক্লিক করুন )

#হাবিবুর রহমান, ঢাকা: একেই বলে দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তিলাভ। গড়লেন অনন্য দৃষ্টান্ত। সারাজীবনে বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করেছিলেন, এবার বৃদ্ধ এসে অনুশোচনায় সেই সমুদয় টাকার দায় মেটালেন। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি এমদাদুল হক (৬৫) ২৫৩০ টাকা বকেয়া পরিশোধ করেন। আর এর মাধ্যমেই সত্যতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেন এমদাদুল হক।

বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কনিকাড়া গ্রামের শামসুল হকের ছেলে এমদাদুল হক। পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তিনি চাকরিজীবন থেকে অবসরে যান। পরিবার নিয়ে বসবাস করেছেন জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইলে। এমদাদুল হকের বড় ছেলে ইমরান বলেন, আমার বাবা সৎভাবে জীবন যাপন করেন। মানুষ মনে কষ্ট পায় এমন কাজ তিনি কখনো করেননি। কারও কাছে এক টাকা ঋণী থাকলেও খুঁজে বের করে তিনি পরিশোধ করেন।

তিনি বলেন, চাকরি জীবনের শেষ দিকে বাবা ঢাকায় দুদকের হেড কোয়ার্টারে ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ট্রেনে তিনি ঢাকা যাতায়াত করেছেন। তখন বিভিন্ন কারণে অনেক সময় বাবা ট্রেনে টিকিট না কেটে আসা-যাওয়া করেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি চাকরি জীবন থেকে অবসরে যান। কিন্তু জীবনে কতবার তিনি ট্রেনে টিকেট না কেটে ভ্রমণ করেছেন, সেই হিসাব তিনি গুনে রেখেছেন। সেই হিসাব অনুযায়ী তিনি সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী কবির হোসেন তালুকদার বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্টেশন কাউন্টারে এক ব্যক্তি আসেন। তিনি জানান- ‘আগে বিভিন্ন সময়ে টিকিট না কেটে তিনি ভ্রমণ করেছিলেন এবং তার কাছে হিসাব আছে যে কতবার টিকিট না কেটে ভ্রমণ করেছেন। সে হিসাবে উনি ২৫৩০ টাকা টিকিট বা ভাড়া বাবদ রেলকে দিতে চাচ্ছেন।’ তখন স্টেশন বুকিং কাউন্টার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-চট্টগ্রাম পর্যন্ত মহানগর প্রভাতীর ২৫৩০ টাকা সমমূল্যের আসনবিহীন টিকিট ইস্যু করে দেওয়া হয়।

পরে তাকে স্টেশন প্রধান বুকিং সহকারীর অফিসে বসিয়ে আপ্যায়ন এবং ধন্যবাদ দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, এমদাদুল হক নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা দিয়ে গেলেন যে রেলে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা অন্যায়। তিনি সবার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। তার ট্রেন ভ্রমণে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করব। এ বিষয়ে এমদাদুল হক বলেন, আমি যত পুণ্যই করি না কেন, এই দেনার দায় তো কোনো পুণ্য দিয়ে শোধ করার উপায় নেই। তাই সরাসরি রেলের খাতেই জমা দিয়ে দিলাম। জানি না তাতে আমার দায় মুক্তি হবে কি না। তবে অন্তত মানসিক প্রশান্তি পাব।

Leave a Comment