



#কালিয়াগঞ্জঃ এ’পুজোর ইতিহাস জানা নেই কারও। প্রাচীনত্বে এই অঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো পুজোর স্বীকৃতি পেতে পারে ঐতিহাসিকদের কাছে। পুজোটি হল কালিয়াগঞ্জ ব্লকের ভান্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের টুংগইল বিলপাড়া এলাকার। এখানে নিয়মনিষ্ঠাা সহকারে অষ্টমীর দিন পুজিত হয়ে আসছেন চন্ডি। বাসিন্দাদের কথায়, পাঁচ বোনের বড় বোন হলেন মহারাম চন্ডি এবং ছোট বোন হলেন গুড় গুড়াই চন্ডি। টুংগইলের কিছু দূরে বিলপাড়ার শেষ সীমান্তে অবস্থিত গুড় গুড়াই চন্ডির মন্দির।
এম এস কে স্কুল, নাটমন্দির, দেব দেবতার স্থান ঘেরা মহারাম চন্ডির মন্দির। এখানে আশ্বিনের দূর্গোৎসব ছাড়া বছরের শুধুমাত্র বৃহষ্পতিবার দিনটিতে পুজিত হন মহারাম চন্ডি। তবে, এলাকাবাসীর একান্ত ইচ্ছায় গতবছর থেকে দুর্গাপুজার পাঁচদিন ধরেই পুজোর আয়োজন করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে তৈরি মন্দির কমিটি। এলাকার বাসিন্দা তথা মহারাম চন্ডী পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ খেকটু দেবশর্মা আবেগ প্রবন চিত্তে জানালেন, ‘এক সময় অষ্টমীর দিনে মহা সমারোহে পুজিত হতেন মহারাম চন্ডি। বছরের অনান্য দিন কমিটির সদস্যের বাড়িতে মায়ের গহনা রাখা থাকলেও, অষ্টমী তিথিতে মাকে রাজনন্দিনী রুপে সাজিয়ে তোলা হতো। কিন্তু, গতবার থেকে পাঁচদিন ধরেই চন্ডির পুজোর্চনার চল শুরু হয়েছে এখানে।তবে, বিলাপাড়ার গুড় গুড়াই চন্ডি পুজো শুধুমাত্র অষ্টমীর দিনকে ঘিরেই হয়’।
পঞ্জিকা মতে, ধরিত্রীতে দশভুজা ছাড়াও চন্ডিরুপেও পুজিত হন দেবী উমা। নিয়মের প্রকার ভেদ থাকলেও ভক্তিপূর্ণ নিবেদনের মধ্য দিয়ে শতাধিক বছর ধরে পুজিত হয়ে আসছেন কালিয়াগঞ্জের মহারাম চন্ডি ও গুড় গুড়াই চন্ডি। গ্রামীণ পরিবেশে জাঁক জমকের তেমন ছোঁয়া না পড়লেও মনষ্কামনা পূরণে দূরদূরান্ত থেকে শত শত দর্শনার্থীরা এসে অষ্টমীতে হাজির হন মায়ের দুয়ারে। পঞ্জিকার পাতায় আশ্বিনের অষ্টমী তিথিতে বাংলার উৎসব ও মেলার বর্ণনে বহু বছর ধরে জায়গা করে নিয়েছে কালিয়াগঞ্জের এই দুই চন্ডি পুজো।
মহারাম চন্ডি পুজোর অভিজ্ঞতার কথা মেলে ধরলেন নব্বই বছর বয়সী মিত্র মোহন দেবশর্মা। জানালেন, ‘এক সময় ভরা জঙ্গল ছিল এই এলাকায়। বাঘের দেখা পাওয়া যেত মাঝেমধ্যেই। এখানে সিংহের উপর চারহাত মেলে অধিষ্ঠিত হয়েছেন মা মহারাম চন্ডি। তবে, এক সময় মৃন্ময়ী মূর্তির চল ছিলনা এই পুজোকে কেন্দ্র করে। এখানে শোলা নির্মিত মাতৃ মূর্তি তৈরি করেই পুজিত হতেন মহারাম চন্ডি। পায়রা, পাঠা বলিদানের চল ছিল অষ্টমীর দিনে। এখন বলিপ্রথা বন্ধ হয়েছে। শুধুমাত্র উৎসর্গের প্রথাটুকু রয়েছে। একাকার বাসিন্দা তাকু দেবশর্মা বলেন, প্রচুর মানুষের ইচ্ছা পূরণ করেছেন মা মহারাম চন্ডি।
কালিয়াগঞ্জের বাইরের মানুষেরাও গাড়ি নিয়ে অষ্টমী পুজোর দিন হাজির হন এখানে। পুজো কয়েকটি দিন গ্রামের পরিবারে আমিষ ওঠেনা। পুজোর আগে বাড়িঘর পরিষ্কার করার রীতি রয়েছে এখানে। অষ্টমী পুজোর দিন এলাকার বাড়িগুলোতে রান্না বন্ধ থাকে। মায়ের খিচুড়ি ভোগ খেয়েই আমরা পেট ভরাই। গ্রামের অনান্য মহিলারাও সকালে স্নান করে মন্দিরে পুজোর যোগাড়ের কাজে লেগে পড়েন। দশমী এলে মন খারাপ হয়ে যায়।
