



#হাবিবুর রহমান, ঢাকা: বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে গত ১১ দিনে পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছে ৬১৮ মেট্রিক টন ইলিশ। এদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য ত্রিপুরার কৈলাশহর দিয়ে রপ্তানি করা হল বিপুল পরিমাণ পদ্মার ইলিশ।এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ত্রিপুরার কৈলাশহরে ১১ হাজার ৭২৫ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। অবশ্য নতুন করে দুই দফায় আরও ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ মেট্রিক টন করে ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হবে মোট দুই হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন।
৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানির এই আদেশ কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত সোমবার বেনাপোল দিয়ে ১৪ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। এ নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর ১১ কার্যদিবসে মোট ৬১৮ মেট্রিক টন ইলিশ বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়েছে।বেনাপোল স্থলবন্দর ফিশারিজ ইন্সপেক্টর আসওয়াদুল বলেন, ইলিশ রফতানির ২০২১-২০২৪-এর নীতিমালা অনুযায়ী দুই দফায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ মেট্রিক টন করে ৫৯টি প্রতিষ্ঠানকে মোট দুই হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ৫১৬ মেট্রিক টন এবং রবিবার ও সোমবার এই দুই দিনে রফতানি হয়েছে ১০২ মেট্রিক টন।
৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানির আদেশ কার্যকর থাকবে। ভারতে যাওয়া বেশিরভাগ ইলিশ বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়েই পার হয় বলে জানান তিনি।ইলিশ মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অর্পিতা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক বিশুদানন্দা আচার্জি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রক প্রথম দফায় ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে ও পরে আরও ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়। এবার দুই হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হবে। প্রতিকেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ১০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৯৪৮ টাকা। ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের কাস্টম থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ইলিশের এই চালান ছাড় করানো হচ্ছে। ইলিশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো ৫৯টি। বেনাপোল কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া বলেন, ইলিশ দ্রুত রপ্তানির জন্য কাস্টমসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ত্রিপুরার কৈলাশহরে ১১ হাজার ৭২৫ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। দুর্গাপুজোর আগে বাঙালির পাতে পড়ছে পদ্মার ইলিশ।গত ৯ সেপ্টেম্বর জারা এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে কৈলাশহরের ব্যবসায়ী আবদুল মুহিত প্রতি কেজি ৮ ডলার মূল্যে বাংলাদেশি ১৫ লক্ষ ১৫ হাজার ৮০০ টাকায় ২ হাজার কেজি বাংলাদেশি ইলিশ রপ্তানি করেছেন। এছাড়া সেপ্টেম্বরে আরও কয়েকটি দিন রপ্তানি করা হয়েছে ইলিশ। সব মিলিয়ে গত এক সপ্তাহে চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ত্রিপুরার কৈলাশহরে মোট ১১ হাজার ৬৭৫ কেজি ইলিশ মাছ রপ্তানি করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই পথে আরও ইলিশ রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, গত বছরের সেপ্টেম্বরে দু’ দফায় ১১৫ প্রতিষ্ঠানকে ভারতে মোট ৪৬০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হলেও অনেকেই তা করেনি। এবারও ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেতে শতাধিক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য মন্ত্রকে আবেদন করলেও প্রাথমিকভাবে ৫০টি প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে দুর্গাপুজো শুরু। সাধারণত দুর্গাপুজো উপলক্ষেই ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হয়। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ২০১৯ থেকে দেশটিতে আবার ইলিশ রপ্তানি চালু করা হয়। ভারতে গতবার রপ্তানি হয়েছিল ১৪০০ টন ইলিশ। তখন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকাই ছিল রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্যতম বাঁধা। তবে এবার পুজোর পর ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে ৭ অক্টোবর। তাই এবার রপ্তানি বেশি হবে বলে আশা করা হয়েছে। রপ্তানির সময়সীমা বাড়ানোরও চিন্তা করা হচ্ছে।
