



ইসলামপুর: মুসলিম মিস্ত্রীর তৈরী করা কাঠামোতে ২৫৮ বছর ধরে পূজিত হচ্ছে মন্ডল পরিবারের দুর্গা। শুধু তাইই নয়।দুই শতাধিক বছর ধরেই মুসলিমরাও অংশ নিচ্ছেন পূজাতে।পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখে সময়ের স্রোতে পাল্লা দিয়ে ইসলামপুরের মন্ডল বাড়ির দুর্গা পূজার পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ সময়।
এবার এই পুজো ২৫৮ বছরে পা দিলো।উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রাচীন পুজো গুলির মধ্যে এটি অন্যতম বলে দাবি মন্ডল পরিবারের সদস্যদের।মূর্তি থেকে শুরু করে সব কিছুতেই রয়েছে প্রাচীনত্ব এবং সাবেকিয়ানার ছোঁয়া।সেখানে আদৌ কোনও আধুনিকতার ছাপ পড়েইনি।রীতি রেওয়াজ কিংবা পরম্পরায়ও বদলে যায়নি এই বনেদি বাড়ির পুজোয়।
মন্ডল পরিবারের বর্ষীয়ান সদস্যদের সূত্রে জানা যায়,২৫৮ বছর আগে বিহারের কিষানগঞ্জ জেলার উদ্গাড়াতে মহম্মদ শফিক নামে এক মুসলিম মিস্ত্রীকে দিয়ে তৈরি করা হয় মা দুর্গার কাঠামো।মূর্তি ভাসান হলেও রীতি মেনে কাঠামো ভাসান হয়না মন্ডল বাড়ির।সেই কাঠামো রেখে দেওয়া হয় পরের বছরের জন্য।একবার নতুন কাঠামো তৈরি করে এই নিয়মের ব্যতিক্রম করতে গিয়ে রীতিমতো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল মন্ডল পরিবারের সদস্যদের।তারপর থেকে আর সেই ঝুঁকি নেননি কেউই।এভাবেই পেরিয়ে গেছে ২৫৮ বছর।পরের প্রজন্মের উত্তরসূরিদের হাতেই পুজোর দায়িত্ব তুলে দিয়ে যান একেকজন।এভাবেই বংশ পরম্পরায় চলছে বনেদী বাড়ির পুজো।বর্তমানে হরেকৃষ্ণ মন্ডল,রামকৃষ্ণ মন্ডল ও প্রফুল্ল মন্ডল এই তিন উত্তরসূরিই এই পুজোর দায়িত্ব সামাল দিচ্ছেন।
মন্ডল বাড়ির সূত্রে জানা গেছে,প্রায় দুশো আটান্ন বছর আগে বিহারের কিষানগঞ্জ জেলার উদ্গাড়াতে এই পুজোর প্রচলন করেন রাধকান্ত মন্ডল নামে তাদেরই পূর্বপুরুষ।ওই এলাকায় তারা ছাড়া আর সকলেই ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।আর তাই পুজোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ দায়িত্বই সামলেছেন মুসলিমরা।
সময়ের স্রোতে বিহার থেকে এই মন্ডল পরিবার বাংলায় এলেও আজও অক্ষুন্ন এই হিন্দু মুসলিমের সম্প্রীতির পুজো।অনেক মুসলিমই আসেন আমন্ত্রিত হয়ে এই পুজোতে।অনেকে আজও পুজোর দায়িত্ব পালন করেন নিষ্ঠা নিয়েই।পারিবারিক প্রথা অনুযায়ী রথ যাত্রার দিন দেবীর কাঠামোতে প্রথমে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়।এরপর দেবিপক্ষে চক্ষুদান।ফি বছর আয়োজন আর আড়ম্বরে বিহার বাংলার হাজারো হিন্দু মুসলিম মানুষের ভিড়ে উপচে পরে ইসলামপুর পুরাতন পল্লীর এই বনেদি বাড়ির পুজো চত্বর।আজও যেন ম্লান হয়নি কিছুই।
