



#দেবলীনা ব্যানার্জী, রায়গঞ্জ: দুর্গাপুজো কার্নিভালকে ঘিরে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে লাগলো রক্তের দাগ। শুক্রবার রাতে প্রথমবার পুজো কার্নিভাল চলাকালীন মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হল রায়গঞ্জ। কার্নিভাল চলাকালীন একটি ক্লাব তাদের প্রতিমা ষাঁড় গরুর গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছিলো সেই সময় হঠাৎ ষাঁড়গুলো উন্মত্ত হয়ে যায় এবং এদিক ওদিক ছুটতে থাকে। তখনই ষাঁড়ের আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হন ও ষাট বছর বয়সী সাধন কর্মকার নামে এক ব্যক্তিকে ষাঁড় ধাক্কা মারলে তিনি মাথায় গুরুতর চোট পান।
এরপর আহতদের আট জনকে ও সাধনবাবুকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহতদের মধ্যে তিনজনকে ভর্তি করা হয় ও বাকিদের ফার্স্ট এইড দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি থাকায় সাধনবাবুকে তড়িঘড়ি প্রথমে রায়গঞ্জ মেডিকেলের সার্জিকাল বিভাগে ভর্তি করা হয়। এরপর শারীরিক অবস্থার আরও বেশি অবনতি হলে তাকে সিসিইউ তে স্থানান্তরিত করা হয়। রাত ১ টা ৫৫ মিনিটে মৃত্যু হয় তাঁর।মাথায় গুরুতর চোট থাকায় ঐ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত এমএসভিপি বিদ্যুৎ ব্যানার্জি। তিনি বলেন, “ওনার মাথায় প্রচন্ড ইনজুরি ছিলো। আমরা সবরকম চেষ্টা করছিলাম কিন্তু রাত ১ টা ৫৫ মিনিটে তিনি মারা গেছেন। বাকি আহতরা সকলেই ঠিক আছেন।”
দশমীর বিসর্জনের দিন মালবাজারে হড়পা বানে বিপর্যয়ের পর এদিন রায়গঞ্জে পুজো কার্নিভালে ফের মৃত্যুর ঘটনায় শোকের আবহ দ্বিগুণ হল। মালবাজারে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রায়গঞ্জে এদিন কার্নিভালের শুরুতে দু মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। কিন্তু কার্নিভালের শেষ আবার শোকের নতুন আবহ বহন করে নিয়ে আসে। এদিন রায়গঞ্জে কার্নিভাল দেখতে শহরের রাস্তার দুধারে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। গোটা কার্নিভাল পর্ব শান্তিতে কেটে গেলেও শেষে এসে তাল কাটে। এদিন কার্নিভাল মঞ্চ পার করার পরই প্রতিমাবহনকারী তিনটি গাড়ির মধ্যে একটি গাড়ির দুটি ষাঁড় গরু বিরক্তি প্রকাশ করে ছটফট করতে থাকে।
ক্লাব কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সহযোগিতায় তখন তাদের শান্ত করা গেলেও কিছুদূর যাওয়ার পর আবার তারা ভিড়ের মধ্যে উন্মত্ত হয়ে ছুটে যায়। পড়ে যায় দুর্গাপ্রতিমা। ষাঁড় গরু দুটিও মুক্ত হয়ে জনতার ভিড়ের মধ্যেই ছুটতে থাকে। এতেই আহত হন অনেকে, এবং গুরুতর আহত হয়ে সাধনবাবু শেষমেশ মারা যান। মূহুর্তে আনন্দের আবহ বদলে যায় শোকের পরিবেশে। এই বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী পাপিয়া সাহা বলেন, “আমরা আমাদের ক্লাব থেকে প্রতিমা নিয়ে রাস্তা নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পেছনের ক্লাবের প্রতিমার গাড়ি থেকে ষাঁড় ছাড়া পেয়ে দৌড়ে আসে। আমার পিসেমশাই দাঁড়িয়ে ছিলেন। উনি ঘাড় ঘোরাতেই ষাঁড়টা ওনার মাথা শিং দিয়ে ফুটো করে ওনাকে আছড়ে ফেলে। আমরা রাস্তার বাঁ দিকে সরে গেছিলাম বলে বেঁচে গেছি। মন খুব খারাপ হয়ে গেছে। এমনটা হবে ভাবতেই পারিনি।”
মর্মান্তিক এই ঘটনার পর রায়গঞ্জ মেডিকেলে ছুটে আসেন জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মিনা,এসপি সানা আখতার, পৌর প্রশাসক সন্দীপ বিশ্বাস। তাঁরা এসে আহতদের সাথে দেখা করেন।এই বিষয়ে জেলাশাসক জানান, কার্নিভালে একটি ক্লাব গরুর গাড়িতে প্রতিমা নিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ গরুগুলো আয়ত্তের বাইরে চলে যায় ও ভিড়ের ভেতরে ছুটে যায়। এতে আটজন আহত হয়েছেন। একজন ছাড়া বাকি সকলের অবস্থা সংকটমুক্ত।
অন্যদিকে পুজো কার্নিভালে বাবার মৃত্যুতে ক্লাব ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালেন মৃতের মেয়ে জুলি কর্মকার। কার্নিভালে অংশগ্রহণকারী ভারত সেবক সমাজ ক্লাবের সভাপতি সাধন কর্মকারের মৃত্যুকে ঘিরে উঠছে নানান প্রশ্ন। অভিযুক্ত অনুশীলনী ক্লাব ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মৃতের মেয়ে জুলি কর্মকার। সরকারি অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণহীন পশুদের নিয়ে কি করে একটি ক্লাব জনস্রোতে প্রবেশ করলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এই ঘটনার জন্য জুলি কর্মকার সরাসরি ওই ক্লাব ও প্রশাসনকে দোষারোপ করেছেন। তিনি অভিযুক্ত ক্লাব এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান। যদিও এই ঘটনায় প্রশাসনের তরফ থেকে প্রয়োজন মত তদন্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
