



#চন্দ্র নারায়ণ সাহা, রায়গঞ্জঃ রায়গঞ্জ শহরের পুবদিক ঘেঁষে বিস্তৃত রয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। সেই সড়কের ধারেই একলা, নির্জনে দাঁড়িয়ে রয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলা ফরওয়ার্ড ব্লকের পার্টি অফিস। ঘর আছে, নেই কোনো কর্মীর দেখা। নেই কোনো চেয়ার, টেবিল, নেই কোনো কাগজপত্র। শুধু ছাদের ওপর উড়ছে ফরওয়ার্ড ব্লকের একটি দলীয় পতাকা আর বদ্ধ ঘরের একপ্রান্তে রয়েছে দলের প্রতিষ্ঠাতা নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোসের একটি ফ্লেক্স।
৩জন মানুষ ভাড়ায় থাকেন ওই পার্টি অফিসের ছোট ছোট ঘরে, তাদের ভাড়াতেই কোনোমতে টিমটিম করে জ্বলছে জেলা পার্টি অফিসের আলো। সেই আলোতেই জেলার পার্টি অফিসকে রক্ষা করে রেখেছেন দীনেশ বর্মন নামের এক বিজেপি কর্মী। পার্টি অফিসে যে কোনো লোকজন আসে না, সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তাদের একজন রতিবালা বর্মন বলেন, ২০০৯ সালে এই ভবনের নির্মান কাজ শুরু হলেও ২০১০ সালে পূর্ব কলেজপাড়ায় গড়ে ওঠে এই ফরওয়ার্ড ব্লক ভবন। কিন্তু কোনো পার্টি কর্মী এই অফিসে আসেন না। ৩জন মত লোক ভাড়ায় থাকে বলে শুনেছি। বর্তমানে জেলার অন্যতম জনপ্রিয় নেতা আলি ইমরান রামজ্ বা ভিক্টর কংগ্রেসে যোগদান করায় এই অফিসের অবস্থা আরও করুণ হবে বলে জানালেন রতিবালা দেবী।
এদিন সকালে জেলা পার্টি অফিসে গিয়ে হাঁকডাক করতেই মুখ বাড়িয়ে কারন জিজ্ঞেস করলেন এক মহিলা ভাড়াটিয়া। তিনি জানান, তার স্বামী বহুদিন ধরে এখানে থাকেন এবং বর্তমানে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। তবে এই ভবনে যে তিন জন ভাড়া থাকেন এবং তাদের ভাড়ার টাকায় ভবনের কেয়ারটেকারের মাইনে হয় বলে জানালেন কেয়ারটেকার তথা বিজেপি কর্মী দীনেশ বর্মন।
তিনি বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে এই ভবনের কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করছি। যারা ভাড়া থাকেন, তাদের দেওয়া ভাড়ার টাকাতেই অফিসের ইলেকট্রিক বিল ও আমার মাইনে দেওয়া হয়। জেলা সম্পাদক গোকুল বাবু ফোনে খোঁজ খবর নিলেও জেলা অফিসে আসেন না। কখনও মিটিং ডাকলে চেয়ার, টেবিল আনা হয়। দীনেশ বাবু জানান, তিনি বিজেপির সক্রিয় কর্মী। তবে যেহেতু বহুদিন ধরে এই অফিসের দায়িত্বে রয়েছি, তাই কখনও কখনও ফরওয়ার্ড ব্লকের কাজও করতে হয়। জেলার নেতৃত্বে যে বড়সড় ভাঙন এসেছে, সবটাই খোঁজ রাখেন তিনি। তবে, কাজের প্রতি ভীষণ আস্থাশীল এই দীনেশ বর্মন ওরফে লাল বাবু৷
তবে দীনেশ যে জাতীয় কংগ্রেসের অধীনে জেলা পরিষদ থাকাকালীন কংগ্রেসের নেতাদের পেছনে ঘুরঘুর করা সহ বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব থেকে সুবিধা নেন, সেটা জানিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলা ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক তথা করণদিঘীর প্রাক্তন বিধায়ক গোকুল চন্দ্র রায় বলেন, দীনেশ কোনো রাজনৈতিক দল করে না।
ওই ফরওয়ার্ড ব্লক দলীয় পার্টি অফিস তৈরি হওয়ার পর থেকে যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ দীনেশই করে। ভাড়া আদায় সহ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রক্ষা, সবটাই ওর দায়িত্ব। তবে, রাজ্য থেকে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর বয়সের ভারে হেলে পড়া পার্টি নেতৃত্ব কোনোমতে মিটমিট করে জ্বলছে। এরকম পরিস্থিতিতে, এই পার্টি অফিসটি আর কতদিন গোকুল বাবুরা ধরে রাখতে পারেন, সেদিকেই তাকিয়ে সাধারণ মানুষ।
