



#আলিপুরদুয়ারঃ ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দ্বারিকানাথ চতুষ্পাঠী আলিপুরদুয়ার সংস্কৃত কলেজের। কিন্তু ২০০৭ সালের পর থেকে ২০২২ সালেও এই কলেজের অধ্যক্ষ নিজে নিয়মিত বেতন পেলেও আজকাল একেবারেই বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে এই সংস্কৃত টোলের গেট, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। অভিযোগ স্বীকারও করে নিয়েছেন টোলের বর্তমান অধ্যক্ষ নিত্যানন্দ নন্দী।
জানা গেছে, আলিপুরদুয়ার পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিধাম কলোনিতে ১৯৩৬ সালে তৎকালীন ইংরেজ আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি সংস্কৃত শিক্ষার টোল। নাম দেওয়া হয় দ্বারিকানাথ চতুষ্পাঠী সংস্কৃত কলেজ। কলেজের অধীনে বর্তমান অধ্যক্ষ নিত্যানন্দ নন্দী জানান, ১১জনের একটি কমিটি গঠন করে এই কলেজের পঠনপাঠন চলত। কিন্তু সময়ের ফেরে তৎকালীন পরিচালনা সমিতির অনেক সদস্যই আজ প্রয়াত। তবুও ধুঁকে ধুঁকে চলছে এই কলেজ। দীর্ঘদিন ধরে যে কলেজের দরজা বন্ধ, সেকথা স্বীকার করে নিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, বর্তমানে খাতায় কলমে ৩২ জন পড়ুয়া রয়েছে। কিন্তু তারা কেউই শহরের শেষ মাথার ওই কলেজে যেতে চান না।
তাই সপ্তাহের ক্লাস গুলো আমার বাড়িতেই করি। সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করতেই অধ্যক্ষ জানান, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী একজন গ্রুপ ডি কর্মী ছিল। সেই পদটিও তুলে দেওয়ায় এখন দরজা খোলা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার মত কেউ নেই। তাই পড়ুয়ারা আমার বসত বাড়িতেই শিক্ষা গ্রহণ করতে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা দেবিকা চক্রবর্তী বলেন, আমি ছোটো থেকে এই সংস্কৃত টোল খুলতে দেখিনি। তবে, প্রতি বছর নিয়ম করে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ থেকে কলেজ পরিদর্শনে সরকারি আধিকারিকেরা আসেন। ওইদিন অধ্যক্ষ নিজে উপস্থিত থাকেন। ছাত্ররাও আসে। বাকি দিনগুলোতে কারোর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না।
এদিকে নিজের কলেজের এমন অসহায় অবস্থা দেখে ভীষণ মন খারাপ অধ্যক্ষ নিত্যানন্দ নন্দীর। তিনি বলেন, এক হাজার শতাংশ বলে যদি কোনো শব্দ থাকে, আমি ততটাই মনের কষ্টে আছি। টোলের মধ্যে চেয়ার, টেবিল, চৌকি, ব্ল্যাকবোর্ড আছে। গত নির্বাচনের আগে বিডিও অফিস থেকে ঘরটিকে নতুন করে বানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আদি, মধ্য, কাব্য তীর্থ ডিগ্রি সহ পুরোহিত বা পন্ডিত হওয়ার যোগ্যতা হারাচ্ছে আজকের ছেলেমেয়েরা।
নিত্যানন্দ বাবুর কথায়, সঠিক সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণ যখন সাধারণ মানুষের কানে পৌঁছায়, তার মধ্যে দিয়ে ধনাত্মক অনুরণন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এই সংস্কৃত টোল গুলোতে পরীক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সঠিক উচ্চারণ শিখতে পারছে না নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা। তাঁর আশঙ্কা, তার অবর্তমানে কোচবিহার, রায়গঞ্জের টোলগুলোর মত এই কলেজও একেবারে বন্ধ না হয়ে যায়। এমনটাই আশঙ্কা পলাশবাড়ীর বাসিন্দাদেরও।
