



#মালবাজার: মাল বাজারে মহাদশমীর বিসর্জন ঘাটে হড়পা বানে প্রয়াত হয়েছিলেন মাল শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর কলোনির তরুণী সুস্মিতা পোদ্দার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরে মাল বাজারে এসে প্রয়াত অন্য পরিবারের পাশাপাশি এই পরিবারের সাথেও দেখা করেন। প্রশাসনিক বৈঠকে মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী সুস্মিতার দাদা সুদীপ পোদ্দারকে চাকরীর প্রদানের এনরোলমেন্ট শংসাপত্র তুলে দেন।
সুদীপকে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে হোম গার্ডের চাকরীতে যোগদানের এনরোলমেন্ট শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল। এবার সুদীপ প্রশাসনিক মহলে সরাসরি চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে স্থায়ী সরকারী চাকরীই করতে চান। তার পরিবারের পরিস্থিতি এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ অন্যান্য বিষয় দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেছেন। সুদীপ আবেদন তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন মহলে চিঠি পাঠিয়েছেন।
সুদীপের বক্তব্য, তার শিক্ষাকতা যোগ্যতা বিচার করে তাকে পূর্বে স্থায়ী সরকারী চাকরি প্রদানেরই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। গত ৫ অক্টোবর মাল নদীর বিসর্জন ঘাটে হড়পা বানে আট জন প্রয়াত হয়েছিলেন। মৃতদের তালিকায় মাল শহরের উত্তর কলোনির তরুণী সুস্মিতা পোদ্দারও ছিলেন। ঘটনা কে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়। দফায় দফায় বিভিন্ন মহল প্রয়াতদের পরিবারগুলোর সাথে দেখা করে। পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং মালবাজারে এসে ১৭ই অক্টোবর প্রয়াতদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সাথে নিজে দেখা করেন। ১৮ই অক্টোবর তাদের মাল আদর্শ বিদ্যাভবনের প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে আহ্বানও জানান। সেই বৈঠকের পরিবারের সদস্যরা সামিল হন। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াতদের পরিবারের একজন করে সদস্যদের চাকরি প্রদানের অফার লেটার তুলে দেন। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকেই প্রয়াত সুস্মিতা পোদ্দারের দাদা সুদীপ পোদ্দার চাকরীর এনরোলমেন্ট সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন।
সুদীপের বক্তব্য, আমাকে পুলিশের হোমগার্ড বিভাগের দেওয়া এনরোলমেন্ট শংসাপত্র দেওয়া হয়। এই চাকরী ভলেন্টিয়ার ইন নেচার বলে উল্লেখ আছে। আমি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সাথে জব প্রোফাইল নিয়ে যোগাযোগ করি। আমি বুঝতে পারি এই চাকরী মুখ্যমন্ত্রী প্রদেয় আশ্বাসের মোতাবেক স্থায়ী সরকারি চাকরী নয়। সুদীপের কথায় আমার বাবার প্রবীণ। মা গৃহবধূ। আমি বেসরকারিভাবে কাজ করি। আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়।
আমি তাই আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা মোতাবেকই স্থায়ী সরকারী চাকরির প্রদানের আবেদন জানিয়েছি। এই আবেদন বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জিও করেছি। মাল মহকুমা স্তরের সরকারি কার্যালয়ে চিঠি জমা করার পাশাপাশি ডাকযোগেও বিভিন্ন মহলে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি। এদিকে, এবিষয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করলে জলপাইগুড়ি জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন উনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহল থেকে দেখা হবে। এদিকে রাজনৈতিক মহল গুলিও এ বিষয়ে ফের নতুন করে চাপানো উতোর শুরু হয়েছে। বিজেপির মাল শহর মন্ডল কমিটির সভাপতি নবীন সাহা বলেন, সুদীপবাবু উনার পরিস্থিতি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে রাজ্য সরকার এ ধরনের অসহায় পরিবারদের সাথে শুধুমাত্র দেখনদারিই করেছে।
সিপিএমের মাল এরিয়া কমিটির সম্পাদক রাজা দত্ত বলেন, আমরাও চাই ওদের স্থায়ী চাকরীই হোক। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের মাল শহর কমিটির সভাপতি অমিত কুমার দে বলেন, প্রশাসন সুদীপ পোদ্দারের আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করবে। তবে বিরোধীদল গুলি শুধুমাত্র রাজনীতিই করে। তারা মানুষের পাশেই দাঁড়ায় না। কটাক্ষের সুরে অমিত বলেন গুজরাটেও সেতু দুর্ঘটনায় মৃতের পরিবারদের আদৌ কি সহায়তা করা হয়েছে? তাও জানা দরকার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভাসান বিপর্যয়ে মৃত ব্যাক্তি দের পরিবারের সদস্যরা এখনো পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত আর্থিক সাহায্য পায়নি বলে পরিবার গুলি সুত্রে জানাগেছে।
