News Britant

নবান্নতেই মনসা পুজো, ব্যস্ত উত্তর রূপাহারের রাজবংশী মানুষেরা

Listen

( খবর টি শোনার জন্য ক্লিক করুন )

#চন্দ্র নারায়ণ সাহা, রায়গঞ্জ: শ্রাবণ মাসের সংক্রান্তিতে সারা পশ্চিমবঙ্গে মনসা পুজো পালিত হলেও এদিন এক ভিন্ন  রকমের চিত্র দেখা গেল উত্তর রূপাহারের রাজবংশী অধ্যুষিত এলাকায়। এখানে রাজবংশী সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিনটিতে মনসা পুজো পালনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল। নতুন ধানের আবাহনের সঙ্গে সঙ্গে মনসা মায়ের আরাধনা করা হয় বলে জানালেন স্থানীয়রা। এটাই এখানকার প্রচলিত রীতি।

কথায় আছে, বাংলার মাটিতে বারো মাসে তেরো পার্বণ পালিত হয়। এই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন জাতি, উপজাতি, জনজাতি বসবাস করে এবং তাদের রীতিনীতি আচার আচরণ পুজো-পার্বণ খাদ্যাভ্যাস সবই গড়ে ওঠে স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে। সেই ভাবেই রায়গঞ্জ শহরের উপকন্ঠে উত্তর রূপাহারে শুরু হয়েছে মনসা পুজোর প্রস্তুতি। এই পুজো ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে প্রতিমা শিল্পী ধ্রুবজিৎ বর্মনের মধ্যে। উল্লেখ্য এখানে প্রতিমা তৈরি করেন স্থানীয়রাই।

মৃৎশিল্পী ধ্রুবজিৎ বর্মন জানায়, রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ হলেও এক শিবু বর্মনের শিষ্য হিসাবে সে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছে। প্রতিমা তৈরির খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে। তবুও স্থানীয় মানুষের দাবি মেনে তাদের চাহিদা পুরনের জন্য প্রতিমা তৈরি করতে হয়। প্রতিমা শিল্পীর দিদি ললিত বর্মনের দাবি, উত্তর রুপাহারের স্থানীয় মানুষেরা যারা, মানত করেন, তারা অগ্রহায়ন মাসের নবান্নর দিনে মনসা পুজো করেন ও নতুন ধানের ভাত খেয়ে থাকেন।

মূলত রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই সময়ে  পুজোর আয়োজন করে থাকে। স্থানীয় গ্রামবাসী চৈতি ধর্মনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রতিবছর নবান্ন পালনের সঙ্গে সঙ্গে তারা মনসা পুজো করেন এবং ৪ দিনব্যাপী মনসা গান বসে। এই মনসা গান করার জন্য স্থানীয় ও বাইরে থেকে শিল্পীরা প্রতিবছরই আসেন। মনসা গান শোনার জন্য স্থানীয় গ্রামবাসীরা প্রতিদিন ভিড় জমান ভিন্ন ভিন্ন গৃহস্থের বাড়ি। ঝর্না বর্মন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগামীকাল বিকেল থেকে পুজো শুরু হয়ে যাবে।

পরশু সকালে পূজো শেষে যাদের মানত থাকে, তারা পায়রা, পাঠা বলি দেন। পুরো অগ্রহায়ণ মাস জুড়েই এই পুজো সংঘটিত হবে বলেও জানান তিনি। উত্তর রূপাহারের রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের এই মনসা পুজো স্থানীয় মানুষের ঐতিহ্য এবং পরম্পরাকে বহন করে চলেছে। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে, রুটি রোজগারের টান পড়লেও, নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে এই মানুষেরা তাদের নিজস্বতা টিকিয়ে রেখেছেন।

Leave a Comment