News Britant

সনাতন সুলেখার মধুর দাম্পত্য অমৃত সমান

Listen

( খবর টি শোনার জন্য ক্লিক করুন )

ছবি : কথামৃত

অভিনয় : কৌশিক গাঙ্গুলি, অপরাজিতা আঢ্য, বিশ্বনাথ বসু, অদিতি চ্যাটার্জি 

পরিচালনা : জিত চক্রবর্তী

#দেবলীনা ব্যানার্জী: না বলা কথা কখনো মৃত হয়ে ওঠে, সম্পর্ক তখন হয়ে ওঠে বোঝা। আবার কখনো কখনো সম্পর্কে বলা বা না বলা কথাই হয়ে ওঠে মধুর দাম্পত্যের চাবিকাঠি।  সেই সম্পর্কই হয়ে ওঠে অমৃতসমান। পুরোটাই দুজন মানুষের মধ্যে বোঝাপড়ার বিষয়। বর্তমান সময়ে আমরা যখন ব্যস্ত জীবনে ছুটে চলেছি, তখন এই বোঝাপড়ার অভাবই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুখ্য কারণ হয়ে দাঁড়ায় বিচ্ছেদের।  তাই বলা যায় বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কথামৃতর গল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্ক বা দাম্পত্যের মূল সমস্যা তার সমাধান বা না সমাধানের বিষয়গুলিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এই ছবি। সব সমস্যার সমাধান তো মানুষের হাতে থাকে না, কিন্তু কঠিন  সময়ে একে অপরের পাশে থাকাটাই আসল। ‘কথামৃত’ র গল্প সনাতন গাঙ্গুলি ও সুলেখা গাঙ্গুলির অসম দাম্পত্যের খুঁটিনাটি নিয়ে এগোতে থাকে। অসম দাম্পত্য বলাটা একেবারেই সঠিক নয়। আসলে এই দাম্পত্যে একতরফে কথার অভাব অসমতা এনে দিলেও দাম্পত্য কখনোই অসম হয়ে ওঠে না। যোগ্য সহধর্মিণীর মত সুলেখা নিজেই এই অসমতা দূর করতে এগিয়ে আসে।

নিজের মুখেই সে বলে আমার ও কথা বলতে পারেন না তো, তাই দুজনের কথা আমিই বলি। কি মিষ্টি যে এই মধুর দাম্পত্য। তবে এই দাম্পত্যেও স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে ভাব, আড়ি, রাগ, অভিমান,  ঝগড়া, সমস্যা, কিন্তু সব ছাড়িয়ে রয়েছে অফুরন্ত ভালোবাসা, বিশ্বাস ও সমস্যাকে কাটিয়ে ওঠার অদম্য জেদ। এই সব নিয়েই সনাতন সুলেখার আটপৌরে মধুর দাম্পত্য। কোনো প্রতিবন্ধকতা সেখানে দেওয়াল তুলতে পারে না।

বানিজ্যিক নাচগানওয়ালা, মারপিটসর্বস্ব ছবির দিকে না গিয়ে ‘কথামৃত’ র মত গল্পকে নিজের ছবির জন্য বাছাই করে পরিচালক জিত চক্রবর্তী প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়েছেন। দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকালেন অভিনেতা নির্বাচনে। মুখ্য  চরিত্রে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালকের বাছাই নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।  কৌশিক গাঙ্গুলি সনাতন চরিত্র না করলে সেটা এই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারত কিনা সন্দেহ আছে। নিজের অসহায়তা, যন্ত্রনা,  ভালোবাসা নিয়ে কৌশিক এই ছবির প্রাণ।

আর বাংলা ছবিতে কৌশিক অপরাজিতার এই আনকোরা জুটি অনবদ্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। তাদের বোঝাপড়া,  মান অভিমান, খুনসুটি দর্শককে হাসি কান্না ভালোলাগায় ভরপুর করে তোলে। নিঃসন্দেহে এই জুটি এই সময়ের সেরা জুটি। সুলেখা যখন সনাতনকে বলে,  আমি কি তোমায় ভুল বুঝতে পারি না? এ অভিমান যে ভালোবাসারই এক রূপ। সনাতনের কথা সুলেখার কথা সবই তো সুলেখার মুখ থেকেই ভাষা পায়। তাই সুলেখার কথা থেকেই ছবির মূল সুরটি উঠে আসে, অনেক বছর যদি দুটো মানুষ পাশাপাশি থাকে তাহলে সংসার তৈরি হয়, নাহলে হয় না। পাশাপাশি থেকে যাওয়াটাই মূল লড়াই, নাহলে পালিয়ে যেতে তো সবাই পারে।

সনাতন সুলেখার পাশাপাশি অন্য এক দম্পতির চরিত্রে যোগ্য সঙ্গত করেছেন বিশ্বনাথ বসু ও অদিতি চ্যাটার্জি। ছবির গানগুলিও গল্পের মত মিষ্টি মধুর ও গল্পের মূল আবেগকে ধরে রাখতে, এগিয়ে নিয়ে যেতে যথার্থ ভাবে তাল মিলিয়ে হাজির হয়েছে।  সবমিলিয়ে মিষ্টি দাম্পত্যের গল্প ও কৌশিক অপরাজিতা জুটির অনন্য রসায়নে অমৃতসমান হয়ে উঠেছে জিত চক্রবর্তীর পরিচালনায় এই ছবি।  তাঁর থেকে আগামীতে আরও ভালো বাংলা ছবির অপেক্ষা রইলো, যে ছবি বাঙালিয়ানায় ভরপুর হয়ে সাধারণ মানুষের অমৃতসমান কথা শোনাবে।

Leave a Comment