



#হাবিবুর রহমান, ঢাকা: বাংলাদেশে আগামী ১০ ডিসেম্বর বড় আকারের সমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার দলটির সমাবেশ ঘিরে উৎকণ্ঠা-উত্তেজনা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৬ শর্তে পুলিশ গণসমাবেশ করার অনুমতি দিলেও ঢাকার নয়াপল্টনেই এখন চরম আগ্রহী বিএনপি। ফলে সমাবেশস্থল নিয়ে বিএনপি ও শাসক দল আওয়ামি লিগ নেতাদের বাহাসে রাজনীতির মাঠে উত্তাপের পারদ চড়ছে। প্রথমে বিএনপি পুলিশের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে ছিল।
কেননা শাসকদল আওয়ামি লিগ সমাবেশ করতে চেয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ খালেদা জিয়ার দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি বা বিএনপির মহাসমাবেশকে নির্বিঘ্নে পালনের সুযোগ করে দিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টে সরে যায় শাসকদল। ঢাকার গণভবনে দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন, বিএনপি ডিসেম্বরে যে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে, তা নির্বিঘ্নে পালনের সুযোগ করে দিতে হবে। তবে সেই সমাবেশ ঘিরে যেন কোনওরকম অশান্তি তৈরি না হয়, সেদিকেও কড়া নজর রাখতে হবে প্রশাসনকে।
তাঁর আশঙ্কা, মহাসমাবেশকে সামনে রেখে ওইদিন পরিবহণ ধর্মঘটের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে খালেদা জিয়ার দল। সে বিষয় সাবধান করেছেন হাসিনা। ঢাকার বিখ্যাত সোহরাবর্দি উদ্যানে হবে এই সমাবেশ। তার দু’দিন আগে অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর ছাত্র লিগের সমাবেশ হওয়ার কথা ওই একই জায়গায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ছাত্র লিগকে নির্দেশ দেন, তাদের সমাবেশ যেন এগিয়ে আনা হয়। সেইমতো ৬ ডিসেম্বর সোহরাবর্দি উদ্যানে ছাত্র লিগের সম্মেলন হবে। সেখান থেকে ২ দিনের মধ্যে সমস্ত পোস্টার, ফেস্টুন খুলে ফেলতে হবে। বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক তথা দেশের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়ে দিয়েছেন, ওই সমাবেশে বাঁধা দেবে না আওয়ামি লিগ।
কিন্তু তারা আগুন জ্বালাতে এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। তিনি কটাক্ষের সুরে আরও বলেন, ”বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও। কানাডার ফেডারেল আদালত বিএনপি-কে সন্ত্রাসবাদী দল ঘোষণা করেছে। সোহরাওয়ার্দীর বাইরে অন্য কোনো জায়গায় বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অন্যদিকে বিএনপি অটল নয়াপল্টনে। যে কোনো নৈরাজ্য ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার ছক সাজাতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা একাধিক বৈঠক করেছেন। সেখানে কেউ কেউ সংঘাতের আশঙ্কার কথাও তুলে ধরেছেন। নাশকতার পুরোনো মামলার আসামিদের ওপর রাখা হচ্ছে বাড়তি নজরদারি। তালিকা অনুযায়ী তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের ধরতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের দেওয়া হয়েছে নির্দেশনা। সমাবেশ শেষ হওয়া পর্যন্ত জরুরি কোনো কারণ ছাড়া ঢাকায় পুলিশ সদস্যকে ছুটি নিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ পটভূমিতে জনমনেও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন- আসলে কী ঘটবে ১০ ডিসেম্বর?
অন্যদিকে আওয়ামি লিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য রাজধানীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আওয়ামি লিগ নেতাকর্মী সতর্ক পাহারায় থাকবেন। আমরা নেতাকর্মীকে অনুরোধ জানিয়েছি, সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য। প্রয়োজনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। গতকাল আরেক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ উপলক্ষে বিএনপি দুটি জায়গা চেয়েছিল। আমরা তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছি। এখন তারা বলছে, নয়াপল্টনে কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চায়। সমাবেশ ঘিরে অরাজকতা করার চেষ্টা করলে বিএনপি ভুল করবে।
গণসমাবেশে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যোগ দিলে জামিন বাতিল হবে কিনা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এটা আদালতের বিষয়, সেটা আদালত বুঝবেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, যে কোনো সভা-সমাবেশ ঘিরে পুলিশের এক ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি থাকে। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরেও পুলিশ সজাগ দৃষ্টি রাখছে। গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে থেকে ফোর্স আনা হবে।
