News Britant

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে বাংলাদেশ গেল উদীয়মান খেলোয়াড় মনোজ

Listen

( খবর টি শোনার জন্য ক্লিক করুন )

 

#মালবাজার: শনিবার সন্ধ্যায় নিউ মাল জংশনে কলকাতামুখী কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস এসে পৌঁছছে। টোটো চালিয়ে ছেলেকে ট্রেনে তুলে দিতে এসেছেন বাবা। টোটো চালক বাবা গৌরাঙ্গ রায়ের ছেলে মনোজ রায় রাজ্যে অনূর্ধ্ব ১৭ বছরের বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার শটপুট এবং ডিসকাস বিভাগে চ্যাম্পিয়ন। পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির প্রতিযোগিতাতেও দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী। অভাবের সংসার থেকে উত্তরণ ঘটানো মনোজ এবার বিদেশগামী।

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা পরিষদ আয়োজিত ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ত্রিদেশীয় অনূর্ধ্ব ১৭ অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণকারী। রাজ্যের ১০ জনের দলের অন্যতম খেলোয়ার মনোজ।  টুর্নামেন্টের যোগ দেওয়ার জন্য শনিবার সন্ধ্যায়  নিউমাল জংশন থেকে কলকাতার রওনা দিল সে। বাবা, মা টোটোতে করেই ছেলেকে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছেন স্টেশনে। পৌঁছানোর পূর্বে মালবাজার স্পোর্টস এন্ড অ্যাথলেটিক্স কোচিং ক্যাম্পে মনোজকে সংবর্ধিত করা হয়।

সেখানে কচিকাঁচা খেলোয়াড়রা মনোজদাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছ বেস্ট অফ লাক। কচিকাচাদের চোখও স্বপ্ন দেখছে বড় খেলোয়াড় হওয়ার। মাল শহরের তেশিমলা গ্রামের পূর্ব হায় হায় পাথার এলাকার বাসিন্দা রায় পরিবার। পরিবারের প্রধান গৌরাঙ্গ রায় কৃষিজীবী। স্ত্রী সুমিতা রায় গৃহবধূ। বড় ছেলে মনোজ রায় মাল আদর্শ বিদ্যাভবনের দশম শ্রেণীর পড়ুয়া। ছোট ছেলে ইন্দ্রজিৎ বড়দিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র।পরিবারে আর্থিক অনটন রয়েছে। সংসার চালাতে গৌরাঙ্গ বাবু টোটো চালান।

বড় ছেলে মনোজ বরাবরই খেলা  ভালোবাসে। মাল শহরের মালবাজার স্পোর্টস অ্যান্ড অ্যাথলেটিক্স কোচিং ক্যাম্পে যোগও দেয়। ক্যাম্পের কর্ণাধার তথা খেলা পাগল প্রশিক্ষক সঞ্জয় সোমের জহুরীর চোখ প্রথমেই চিনে নেয় মনোজকে। নিবিড় অনুশীলনের মাধ্যমে একের পর এক সাফল্য আসছে। ইতিমধ্যে মনোজ জেলা, রাজ্য এবং পূর্বাঞ্চল স্তরের প্রতিযোগিতা গুলিতে সাফল্য পেয়েছে। মনোজ শটপুট এবং ডিসকাস ছোড়া দুটিতেই সমানভাবে দক্ষ।

অনূর্ধ্ব ১৭ বিভাগে শটপুটে তার ছোড়া ১৫.৭৫ (পনেরো দশমিক পঁচাত্তর) মিটারের দূরত্ব এখনও রাজ্য রেকর্ড। ডিসকাসেও ৪১.১২ (৪১ দশমিক ১২) মিটার পর্যন্ত ছুড়েছে।  শনিবার বিকেলে মাল শহরের রেলওয়ে ময়দানে ক্যাম্পের উপদেষ্টা ধ্রুব তালুকদার, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুরজিৎ দেবনাথ প্রমূখ মনোজকে সংবর্ধিত  করেন। মনোজ এবার বাংলাদেশে প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে যাচ্ছে। ১৩ থেকে ১৫ ই ডিসেম্বর ঢাকায় প্রতিযোগিতা হবে। মনোজ এবং তার কোচ সঞ্জয় সোম দুজনেই জানেন এখনও অনেকটা দূর চলতে হবে।

সঞ্জয় বাবুর কথায়, এই প্রতিযোগিতায় উত্তরবঙ্গ থেকে একমাত্র প্রতিযোগী মনোজই। ও দারুণ প্রতিভাবান। আমরা আশা করছি আন্তর্জাতিক স্তরেও ভালোই ফল করবে। আমরা এখন প্রতিযোগিতার দিকে তাকিয়ে রয়েছি। মীতভাষী মনোজ  বলল আমি ভালো খেলতে চাই। ভালো খেলা উপহার দিতে চাই। এর জন্যই পরিশ্রম করে যাব ।বাড়িতে আর্থিক অনটনসহ হাজারো সমস্যা রয়েছে। তবু ছেলেকে উৎসাহ দিয়ে চলেছেন বাবা গৌরাঙ্গ রায়, মা সুমিতা রায়। তারা বললেন ও ছোটবেলা থেকে খেলতে ভালবাসে। আমরা ওকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। মনোজের স্কুল মাল আদর্শ বিদ্যাভবনের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক উৎপল কুমার পাল বলেন, আমরাও মনোজকে নিয়ে গর্বিত। ওর আরও সাফল্য কামনা করি।

মনোজকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে মাল বাজারে তার সহযোগী নানা বয়সের খেলোয়াড়েরাও। মনোজকে কলকাতায় পৌঁছে দিতে সহযোগী হিসেবে  রওনা দিয়েছে মালবাজারের প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায়। ক্যাম্পের কচিকাঁচারা মনোজের জন্য আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছে। রিয়া ঘোষ, হিরন বর্মনের মতো কচিকাচারা বলল আমরা চাই এবারও মনোজ দা দারুন ফল করুক। এদিন মনোযোগ যাত্রা শুরু পূর্বে নিজের মাঠে সহযোগীদের সাথে সময় কাটিয়ে মনোজও আপ্লুত।

Leave a Comment