



#চন্দ্র নারায়ণ সাহা, রায়গঞ্জঃ রায়গঞ্জ ব্লকের ১ নম্বর ভাতুন গ্রাম পঞ্চায়েতের নয়ানডাঙ্গি গ্রামে ৭০টির মত খয়রা সম্প্রদায়ের পরিবারের বাস। সেই খয়রা সম্প্রদায়ের একজনও দশম শ্রেণির গন্ডী পেরোতে পারেনি। গ্রাম থেকে পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক স্কুলের দূরত্ব কমপক্ষে ২ কিমি। ফলে ইচ্ছে থাকলেও পড়াশোনার সুযোগ সুবিধা নেই ওই নয়ানডাঙি গ্রামের পড়ুয়াদের। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই আজও আধুনিক শিক্ষার আলো পৌঁচ্ছায়নি এই গ্রামে।


সমগ্র শিক্ষা মিশনের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও শিক্ষা নিয়ে আগ্রহ তৈরি করা সম্ভব হয়নি এই গ্রামে। এসমস্ত দেখে, এবার নতুন ইংরেজি বছরের প্রথম দিন এগিয়ে এলেন ভাটোল সেবাগ্রাম হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তরুন কুমার রায়। নিজের ব্যক্তিগত প্রয়াসে নতুন বছরের শুরু থেকে এই পিছিয়ে পড়া তপশীলি বাসিন্দাদের জন্য তিনি উদ্যোগ নিলেন শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার।


জানা গেছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সীমান্ত কেন্দ্র সরকারের উদ্যোগে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এই নয়ানডাঙি গ্রামে তৈরি করে দেয় কলোনি। সেই কলোনিতে এই মূহুর্তে ৭০টির মত খয়রা সম্প্রদায়ের মানুষজন বসবাস করে। এদের নিজেদের পেশাগত কোনো বৈশিষ্ট্য না থাকায় রয়েছে চরম খাদ্য সংকট। এদের মধ্যে কেউ অন্যের জমিতে কাজ করে, কেউ বা কাজ করতে চলে গেছে ভিন রাজ্যে।


মাতৃভাষা খয়রা হওয়ায় এরা বাংলা ভাষাতেও নয় সাবলীল, নেই হিন্দী ভাষাতেও দক্ষতা। ফলে মাতৃভাষার স্কুল না থাকায় দিনের পর দিন শিক্ষার আলো থেকে এরা গুটিয়ে নিয়েছে নিজেদের, এমনটাই দাবি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তরুন বাবুর স্ত্রী তথা সেবাগ্রাম হাই স্কুলের শিক্ষিকা অনামিকা বর্মনের। তিনি জানান, এদিন ওখানকার শিশু, কিশোর ও বয়স্ক প্রায় ১০০ জন মানুষের হাতে খাতা, কলম, কেক ও মিষ্টি তুলে দেওয়া হয়। তপশিলি সমাজের এই মানুষদের শিক্ষার জন্য কেন এমন উদ্যোগ নিলেন, জানতে চাইলে অথবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তরুন বাবু বলেন, আমি শিক্ষকতা করার সময় বহু চেষ্টা করেছি।

কিন্তু সময়ের বাধ্য বাধকতার জন্য এই গ্রামে এসে বেশি সময় দিতে পারিনি। এখন চাকুরী থেকে অবসর গ্রহনের পর হাতে অনেকটা সময় রয়েছে। তাই সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে নিজে আসব, ছোটোদের স্কুলের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করতে প্রচেষ্টা নেব। এছাড়াও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষায় যেভাবে সহয়তা করছে, সেই সুযোগ সুবিধা গুলো বড়দের জানাবো। তাহলেই ওরা শিক্ষাঙ্গনে যেতে চাইবে। তরুন বাবু এই সামাজিক কাজে পাশে পেয়েছেন তাঁর প্রাক্তন ছাত্র ও পরিবারের সদস্যদেরও।

তাঁর কথায়, শিক্ষাই আনে চেতনা। তাই এই সম্প্রদায়ের পরিবার গুলোর কাছে শিক্ষার আলো টুকু পৌঁছে দিতে পারলে, ওদের আর পিছিয়ে পড়া তকমা ঘোচাতে পারব। তাই এমন উদ্যোগ নিয়েছি। সরকারি শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নত করতে যখন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নানা প্রকল্প গ্রহণ করে চলেছে। বর্তমান রাজ্য সরকারের কোনো কাজ বাকি নেই বলে দাবি করেন, তখন আজও শিক্ষার আলো না পৌঁছানো খয়রা সম্প্রদায়ের মানুষজন এই উদ্যোগে কতটা এগিয়ে আসেন, সেদিকেই তাকিয়ে শিক্ষা মহল।





