News Britant

ধ্বংসস্তুপে পরিবর্তন ডুয়ার্সের প্রথম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প

Listen

( খবর টি শোনার জন্য ক্লিক করুন )

 

#মালবাজার: গত শতকের দ্বিতীয় দশকের কথা, ততদিনে উত্তর বঙ্গের ডুয়ার্স এলাকায় শতাধিক চাবাগান পত্তন হয়ে গেছে। উৎপাদন হয়ে চলছে টন টন চা। বিশাল পরিমাণ এই চা উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাবেক কড়াই আর উনানের পদ্ধতি সমস্যা জনক হয়ে উঠতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, সেই সময় বড় বড় উনানের উপর বিশাল আকারের কড়াইতে আগুনের তাপে সবুজ পাতাকে কালো করা হতো। এই সমস্যা কাটাতে আধুনিক ঘানি সহ অন্যান্য মেসিনপত্র আসতে শুরু করেছে।

আধুনিক মেসিনপত্র চালাতে প্রয়োজন বিদ্যুৎ। তখনও চাবাগান এলাকায় প্রবাহমান বিদ্যুৎয়ের ব্যবস্থা ছিল না। আধুনিক মেসিনপত্র চালাতে সেই সময় কয়েকটি চাবাগান কর্তৃপক্ষ রাসস্টান কোম্পানির জেনারেটর বসিয়েছিল।জেনারেটর চালাতে দরকার পড়তো প্রচুর জ্বালানি তেলের। তাতে খরচও বাড়ছিল। বিকল্প হিসাবে ক্ষুদ্র জল বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের কথা মাথায় আসে ডুয়ার্সের মাল ব্লকের নিউগ্লেনকো ( তখন নাম ছিল শংখনি) চাবাগানের ইংরেজ মালিক। 

প্রকল্পকে বাস্তবে রূপ দিতে বর্তমান জাতীয় সরক এলাকা থেকে শংখনি ঝোড়ার জলকে প্রায় ২ কিমি খালের মাধ্যমে চাবাগানের কারখানায় নিয়ে জলাধারে জমা করা হতো। জলাধারের জনস্রোতের সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে শুরু হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে কারখানায় চা উৎপাদন চলতো। ১৯৩৬ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। প্রায় তিন দশক সেই জল বিদ্যুৎ প্রকল্প সক্রিয় ছিল। তারপর গত শতকের ছয়ের দশকে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ জলঢাকা জল বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ চা বাগান গুলিতে সরবরাহ শুরু করে।

সেই প্রবাহমান বিদ্যুৎ সুলভ হওয়ায় আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায় চাবাগানের নিজেস্ব জল বিদ্যুৎ প্রকল্প। দীর্ঘদিন অব্যবহার্য থাকায় আস্তে আস্তে জল বিদ্যুৎ প্রকল্প ধংসস্তুপ হয়ে যায়। কিন্তু আজও রয়ে গেছে সেই জলাধার ও খাল। চাবাগানের প্রবীণ বাসিন্দা কারখানার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে জানালেন, আমি বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে দেখিনি। তবে বাবার মুখে শুনেছি জাতীয় সরক এলাকা থেকে শংখনি ঝোড়ার জল খালের মধ্যে দিয়ে বয়ে আনা হতো। সেই জলের সাহায্যে পাখা ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো।

শুধু কারখানার জন্যই সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার হতো। অন্য কেউ ব্যবহার করতো না। বর্তমানে ধংসস্তুপ হলেও এই প্রকল্প সংরক্ষণ করলে ডুয়ার্সের চাবাগানে ইংরেজ মালিকদের এক অনন্য কীর্তি হেরিটেজ হিসাবে পর্যটকদের গন্তব্য হতে পারে। তাতে মানুষ জানবে পুরানো ইতিহাস। 

Leave a Comment