




#চন্দ্র নারায়ণ সাহা, রায়গঞ্জঃ আগামী দিনে নিজের একমাত্র সন্তানকে উচ্চ শিক্ষিত করাটাই তাঁর লক্ষ্য। আর এ’জন্য সকাল সন্ধ্যা পিঠে পুলির দোকান বসিয়ে উপার্জনে নেমেছেন স্বামীহারা মঞ্জু দে। খাদ্য প্রেমীরা ভিড় জমিয়ে নিয়মিত আস্বাদ গ্রহণ করছেন মঞ্জু দেবীর হাতে তৈরি গরম গরম পাটি সাপটা, মুগের পুলি, মালপোয়া, পকোড়া সহ নানা ধরনের পিঠেপুলির। এতেই নতুন করে জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন রায়গঞ্জ মোহনবাটির বাসিন্দা মঞ্জু দে।


জানা গেছে, মঞ্জু দেবীর সাথে বিয়ে হয়েছিল গাছের ওষুধের রিপ্রেজেনটেটিভ গৌতম দে’র। কিন্তু ২০১০ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এক মর্মান্তিক পথ দূর্ঘটনায় প্রান হারান গৌতম বাবু। তারপর থেকেই বদলে যায় মঞ্জু দেবীর জীবন যুদ্ধের লড়াই। নানা ধরনের ব্যবসার নামবে বলে, লক্ষী স্টোর্স নামে একটি দোকানের নামও ঠিক করে ফেলেন। কিন্তু কোনোটাতেই কোনো সুবিধা হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত লকডাউনের মধ্যে শুরু করেন পিঠেপুলির ব্যবসা। ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে জীবনের ছন্দ।


এখন প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় মোহনবাটি বাজারের পেছনের গলিতে দোকান বসিয়ে বিক্রি করছেন পিঠে, পুলি। সাথে ক্রেতাদের চাপে রাতের দিকে আজকাল রুটি ও তরকারিও বানাচ্ছেন তিনি। ক্রেতাদের সামলাতে সামলাতে মঞ্জু দেবী বলেন, চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেখি কতটা করতে পারি। অন্য সব খাবারের বদলে পিঠেপুলি কেন বানানো হচ্ছে, জিজ্ঞেস করতেই মঞ্জু দেবীর বক্তব্য, শহরের রাস্তায় ভাপা পিঠার বেশ ভালো বিক্রি হয়।


অথচ বাকি পিঠের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। তাই একটু অন্যরকম করার চেষ্টা করলাম। এখন দিনে ১২০০ টাকার ব্যবসা করছি। এরকম রোজগার চললে আমার সন্তানকে মানুষ করতে কোনে অসুবিধা হবে না। কাঁচা হাতের তৈরি পিঠেপুলি খেতে ভিড় জমিয়েছেন বহু খাদ্যপ্রেমীরা। রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে কেউ খাচ্ছেন খীরের পাটিসাপটা, কেউ নারকেল পুর দেওয়া পাটি সাপটা আবার কারো হাতে মালপোয়া।

খেতে খেতেই পেশায় শিক্ষক প্রীতম ভৌমিক বলেন, বেশ নতুনত্ব আছে এই মালপোয়া ও পাটিসাপটায়। তবে রান্নার কয়েকটা বিষয়ে গুরুত্ব দিলে মঞ্জু দেবীর দোকানে বেশ ভিড় জমবে। সামনেই মঞ্জু দেবীর একমাত্র সন্তানের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। রায়গঞ্জের একটি নামকরা স্কুলের ছাত্র সে। তাই ছেলের পড়াশোনা দেখার পাশাপাশি শুরু হয়েছে এই জীবনযুদ্ধের কঠিন লড়াই। এই লড়াইয়ে মঞ্জু দেবীর পাশে থেকে ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে চলেছেন তাঁর মা গীতা গোড়ে। এই লড়াই যেন এক নারী শক্তির লড়াই, এই লড়াই যেন এক মায়ের স্বপ্ন পূরণের লড়াই। এই লড়াইয়ে মঞ্জু দেবী যে জয় ছিনিয়ে আনবেনই, এমনটাই আশা পাড়াপড়শি থেকে আত্মীয় দের।






