News Britant

রায়গঞ্জের বাড়িতে বিশ্বসেরা সমুদ্র বিজ্ঞানীদের একজন ড. কোয়েনা মুখোপাধ্যায়, সংবর্ধনা দিলেন মোহিত

Listen

( খবর টি শোনার জন্য ক্লিক করুন )

#চন্দ্র নারায়ণ সাহা, রায়গঞ্জঃ বাড়িতে সবসময়ই বাম রাজনীতির আবহ। তার মধ্যে বেড়ে উঠলেও পড়াশোনাই তাঁর নেশা এবং পেশা। এই অধ্যবসায়ই তাঁকে এনে দিয়েছে বিশ্বমঞ্চে সেরার সেরা কৃতিত্ব। আদতে রায়গঞ্জের বাসিন্দা এবং এখন অসমের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, শিলচরের অধ্যাপিকা কোয়েনা মুখোপাধ্যায়ের জন্য বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল হয়েছে বাংলা তথা দেশের মুখ। সেই কোয়েনা মুখোপাধ্যায়কে এদিন রায়গঞ্জ কলেজপাড়ার বাড়িতে তাঁকে সংবর্ধনা প্রদান করলেন রায়গঞ্জের প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত।
ছোট্ট ও অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে উত্তরীয় পরিয়ে ফুল ও স্মারক তুলে দেন মোহিত বাবু। পাশাপাশি মিষ্টিমুখ করিয়ে আশীর্বাদ করেন রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক তিলকতীর্থ ভৌমিক। নিজের শহরে, সমুদ্র বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা ও গবেষণার জন্য সংবর্ধিত হতে পেরে ভীষণ খুশি ড. কোয়েনা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, গতবছরের ২৬ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে সমুদ্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জড়িত যে দশ জন মহিলা বিজ্ঞানীকে  সম্মানিত করা হয়, তার মধ্যে আমিও ছিলাম। আমার গবেষণার কাজ হচ্ছে রোবোটিকসের উপর। এই রোবোটিকস আন্ডার ওয়াটারেও নিজেই যেতেই পারবে। এই রোবোট ফ্লেক্সসেবল, সরলরেখা হয়ে যেতে পারে, আবার বক্ররেখা হয়েও যেতে পারে। রোবোটটি একদম মাছের আকৃতির।
ডুবো জাহাজ নয়, রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে সমুদ্রের নীচ দিয়ে যাতায়াত করার উপায় নিয়ে গবেষণা করছি। তিনি বলেন, মাছ যেভাবে সমুদ্রের নীচ দিয়ে জলের গতির বিরুদ্ধে যাতায়াত করে সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই এই গবেষণা চলছে। হাসিখুশি ড.কোয়েনা জানান, নিজের গবেষণার কাজ আগামী দিনে সম্পদ হিসেবে গন্য হবে।কোয়েনার বাবা শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়ের বাম আমলের মন্ত্রী ও সিপিআই নেতা। তাঁকে পাশে বসিয়ে মোহিত বাবু কোয়েনাকে নিয়ে যেমন গর্ব প্রকাশ করেছেন, তেমনি আক্ষেপ করেছেন রাজ্য তথা কেন্দ্র সরকারের এত বড় সফলতাকে হেয় করার চেষ্টাকে। তিনি বলেন, কোয়েনার মত মেয়ের জন্য আমরা জেলাবাসী হিসেবে গর্বিত। ও আরও এগিয়ে যাক, সবসময়ই শুভেচ্ছা রইলো তাঁর চলার পথে। তবে আক্ষেপ জানিয়ে মোহিত বাবু বলেন, এত বড় সফলতা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকার ড. কোয়েনার সফলতাকে অবজ্ঞা করছেন। কোনো সংবর্ধনা বা পুরস্কার দেওয়া হয় নি, এটা লজ্জার।
ড. কোয়েনা মুখোপাধ্যায় মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন রায়গঞ্জ গার্লস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন রায়গঞ্জ করোনেশন স্কুল থেকে। এরপর হলদিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে বি-টেক। তার পর দু’টি এনআইটি থেকে এমটেক পাশ করার পর দিল্লি আইআইটি থেকে ২০১৬ সালে পিএইচডি শেষ করেছেন। এখন ড. কোয়েনা কাজ করছেন জলের তলায় রিমোট কন্ট্রোলে চলা যানবাহন নিয়ে। যা চালাবে রোবট। এই মুহূর্তে তিনি এমন একটি জলের নীচের (সাবমেরিন) যান তৈরি করছেন, যা দেখতে হবে অনেকটা মাছের মতো। ওজন ৫ কেজির আশপাশে। যা সহায়ক হবে মৎস্যচাষের নানা তথ্য জলের গভীর থেকে সহজে মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে। এই কাজ করতে গিয়েই বিশ্বমঞ্চের ওই স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।
মাতৃভাষা বাংলায় প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়া কোয়েনার বাবা গর্বিত শ্রীকুমার বাবু বলেন, কোয়েনার এই সফলতার পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে সবসময়ই ছিল ওর  মা ড. স্বপ্না মুখোপাধ্যায়। কোয়েনার জন্য আমরা ভীষণ গর্বিত। বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে এত বড় সফলতা সত্ত্বেও কেন যে সবাই আজকাল ইংরেজি মাধ্যমে চলে যাচ্ছে, সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এদিন মোহিত সেনগুপ্তের সাথে ছিলেন রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক তিলক তীর্থ ভৌমিক, তুষার গুহ, তন্ময় দত্ত সহ একাধিক কংগ্রেস নেতৃত্ব।

Leave a Comment