



#চন্দ্র নারায়ণ সাহা, রায়গঞ্জঃ উত্তর দিনাজপুর জেলার ভূগর্ভস্থ জলের আপাতদৃষ্টিতে কোনো সংকট নেই। বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ছড়ানো এই জেলার ভৌমজলে দ্রবীভূত খনিজের পরিমান বিপদসীমার নিচে থাকলেও সমস্যা তৈরি হয়েছে জেলার উত্তর দিকের ২টি ব্লক নিয়ে। ইসলামপুর ও চোপড়া ব্লকের চা বাগান গুলোতে অতিরিক্ত জলের ব্যবহার ক্রমশ অশনিসংকেত তৈরি করছে ভৌমজলস্তরের ওপর। এতেই দূর ভবিষ্যতে এই ২ ব্লক সহ উত্তর দিনাজপুর জেলা জলের সংকটে ভুগতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারত সরকারের ভূজল বোর্ডের সি বিজ্ঞানী (এইচ জি) দেবাশীষ বাগচী।


জানা গেছে, বিগত ৩রা ফেব্রুয়ারী উত্তর দিনাজপুর জেলার শীর্ষ আধিকারিকদের সামনে বিগত প্রায় ১ বছর ধরে চলা ফিল্ড স্টাডি রিপোর্ট পেশ করেন বিজ্ঞানী বাগচী। সেখানেই এই আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড জল শক্তি মন্ত্রক, ভারত সরকার, পূর্বাঞ্চল বিভাগের পক্ষ থেকে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় অ্যাকুইফার ম্যাপিং এবং ম্যানেজমেন্ট স্টাডির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তারই ফলাফল শনিবার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে বিবেকানন্দ হলে উপস্থাপন করা হয়।


সেখানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অভিষেক চৌরাসিয়া (আই.এ.এস), অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা পরিষদ, উত্তর দিনাজপুর সহ বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকেরা। বাগচী বাবু বলেন, আমাদের ফিল্ড স্টাডির মূল উদ্দেশ্য ছিল অ্যাকুইফার ম্যাপিং এবং ম্যানেজমেন্টের ফলাফল শেয়ার করা এবং অ্যাকুইফারের সাবসারফেস ডিসপোজিশন, তাদের বৈশিষ্ট্য, ব্লক- লেভেল অ্যাকুইফার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের উন্নয়ন, ভূগর্ভস্থ জল গবেষণায় ডেটা গ্যাপ বিশ্লেষণ করা।


উত্তর দিনাজপুর, ভূগর্ভস্থ জল স্তরের গভীরতা, ভূগর্ভস্থ জল স্তরের দীর্ঘমেয়াদী ওঠানামা, ভূগর্ভস্থ জল প্রবাহের দিক নির্দেশ বিশ্লেষণ, ভূগর্ভস্থ জল গুণমান বিশ্লেষণ এবং অংশগ্রহণমূলক ভূগর্ভস্থ জল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জল সম্পর্কিত সমস্যা ও সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং তাদের সমাধান করা। সেই স্টাডি করতে গিয়েই আশঙ্কার কালো মেঘ দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানী বাগচী। তিনি বলেন, যেভাবে জলসম্পদকে অযাচিত ভাবে তুলে চা চাষের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তাতে ভৌমজলের সংকট আসতে বাধ্য। তাহলে উত্তর দিনাজপুর জেলা বাসী কে ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন, জানতে চাইলে জেলা ভূতত্ত্ববিদ উদ্দীপন দাস বলেন, চা বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা হাই ক্যাপাসিটি মার্শাল বসিয়ে ভৌমজল দ্রুত তুলে নিচ্ছে। এতে আপাতত কোনো সমস্যা না হলেও উত্তর দিনাজপুরে ভবিষ্যতে ইসলামপুর ও চোপড়া ব্লকে পানীয় জলের যোগানে সমস্যা তৈরি হতে পারে।

জানা গেছে, এখন বিপদসীমার নিচে থাকলেও, উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়াই সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক প্রভাবিত ব্লক। এই চিন্তা গুলো বিজ্ঞানী মহলকে নাড়িয়ে দিলেও, যতদিন না সাধারণ মানুষ জলের সঠিক ব্যবহার নিয়ে সচেতন হচ্ছেন, ততদিন এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয় বলেই বিশ্বাস অভিজ্ঞ মহলের।




