



#চন্দ্র নারায়ণ সাহা, রায়গঞ্জঃ রায়গঞ্জ শহরের ফলের দোকান গুলোতে চোখ রাখলেই দেখা মিলবে নানান আকৃতির, রঙবেরঙের কুল। এই কুলের যোগান আসছে মূলত উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহারের বিভিন্ন গ্রাম এবং মালদা জেলার চাঁচোলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে। ভোর বেলায় টোটো, অটো চাপিয়ে নানা আকৃতির কুল নিয়ে রায়গঞ্জের মোহনবাটির পাইকারি বাজারে উপস্থিত হচ্ছেন বিক্রেতারা। উৎপাদনকারী কুল চাষিরা নিজেরাই এসেছেন পাইকারি বাজারে ফল বিক্রি করতে।


তাদের মধ্যে রেশারেশি না থাকলেও আজকাল কুলের দাম পড়ে যাওয়ায় কুল চাষে লাভের পরিমান অনেকটা কমেছে বলে জানালেন কুল চাষীরা। রায়গঞ্জ মোহনবাটি বাজার এই এলাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি ও খুচরো বাজারের জন্য প্রসিদ্ধ। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই বাজারে আসেন আশেপাশের অঞ্চলের বহু বিক্রেতা ও ক্রেতা। চলে নানান ধরনের শাক, সবজি, ফল, ফুলের বেচাকেনা।


এই বাজারেই এদিন সকালে গিয়ে দেখা গেল, কুল নিয়ে এসে উপস্থিত হয়েছেন মালদা জেলার চাঁচোল, আশাপুর সহ ইটাহারের মহানন্দা নদীর পাড়ের কুল চাষীরা। প্রত্যেকেই কমপক্ষে ৩/৪ বিঘা জমিতে এই আধুনিক জাতের কুল চাষ করেছেন বলে জানালেন তারা। কুল চাষীদের একজন হামিদুল হক। তার বাড়ি মালদা জেলার চাঁচোল থানার কিসমতপুরে। তিনি বলেন, রায়গঞ্জের বাজারে প্রায় প্রতিদিনই আসি কুল বিক্রি করতে। নিজের ২ বিঘা জমিতে প্রতিবছরই কুল চাষ করি। প্রতিবছর ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা উপার্জন হয় এই কুল বিক্রি করে।


এই কুল রায়গঞ্জের বাজার থেকে দিল্লি, আগ্রা, নেপাল, ভুটানে চলে যায় বলে জানালেন চাষীরা। মালদা জেলার চাঁচোল মহকুমার সন্তোসপুরের কুলচাষী কুরবান আলি জানান, আমরা মহানন্দা নদীর তীর বরাবর দুপাড়ের জমিতে প্রতি বছর বাহু, বউ সুন্দরী, ভারত সুন্দরী ছাড়াও আরও নানা প্রজাতির কুল চাষ করা হয়। ফল পাকলে মালদা ছাড়াও রায়গঞ্জের বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসি। প্রতিদিন গড়ে ৪ কুইন্টাল করে কুল আনি। তার কথায়, আগে ভালো লাভ হলেও এবছর ফলন বেশি হওয়ায় যোগান বেড়েছে অনেকটা, তাই লাভ আর ততটা হয় না।

একি বক্তব্য সফিকুল আলম, শাহজাহান আলিরও। ইটাহারের ইমদাদুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামে বহু মানুষ কুল চাষ করছে। আগে লাভ বেশি হত, এখন অনেক আয় কমেছে। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে পশ্চিম বঙ্গের বাইরে এই কুল বিক্রি করলে চাষীরা লাভবান হবেন। তাদের সাথেই এদিন রায়গঞ্জ মোহনবাটি বাজারে এসেছিলেন, আশাপুর, সন্তোষপুর, কিসমতপুর, কাচনাবাড়ি এলাকায় এই নতুন প্রজাতির কলম কুল চাষের মূল কারিগর রফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমি নদীয়া ও কোলকাতা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির কলম কুলের গাছের চারা তৈরি করিয়ে আনি। তারপর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিক্রি করি।

এই কুল চাষ করলে, এক বিঘা জমি থেকে বছরে ১ লক্ষ টাকার অধিক লাভ হতে পারে। তিনি জানান, বাহুবলী কুল গাছ গুলো এক বছর ফলন দেয়। তারপর আবার নতুন চারা লাগাতে হয়। কিন্তু বাকি বউ সুন্দরী, ভারত সুন্দরী গাছ গুলো একবার লাগালে ৫ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। তিনি জানান, এই মূহুর্তে ইটাহার, চাঁচোলের দেড় হাজার বিঘা জমিতে এই প্রজাতির কুল চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। তবে আগের মত লাভ আর আজকাল হয় না। সকাল সকাল বাজারে এসে কম দামে কুল পেয়ে খুশি পাইকারি ক্রেতারাও।

টোটো, ভ্যান, অটোতে চাপিয়ে কুল চলেছে হেমতাবাদ, টুঙ্গিদীঘি, ইসলামপুর, কালিয়াগঞ্জে। বড় পাইকাররা এই কুল পাঠাচ্ছেন দিল্লি, আগ্রা ও নেপালে। দুপুর হতেই খুচরো ফলের দোকানে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে বড় আকৃতির রঙিন বউ সুন্দরী, বাহুবলী, ভারত সুন্দরীর মত ফলেরা। নাম না জানলেও খেয়ে তৃপ্ত হচ্ছেন কুল প্রেমীরা।



