





#চন্দ্র নারায়ণ সাহা, বালাসোরঃ বিভিন্ন ধরনের পেশাকে নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন ভারতের সাধারণ মানুষ। কিন্তু ওড়িশার বালাসোর জেলার জম্বিরাই গ্রামের বাসিন্দাদের পেশা একেবারে অন্যরকম। এই পেশার ক্ষেত্রে নামতে হয় সম্মুখ লড়াইয়ে। লড়াইয়ে জিতলে মেলে নগদ ৫ হাজার টাকা। কিন্তু হেরে গেলে মৃত্যু হয় লড়াইয়ে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়ের। কি এই লড়াই, কিভাবে খেলতে হয়, এই সব আগ্রহ নিয়ে আমরা যখন পৌঁছাই বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এই জম্বিরাই গ্রামে, তখন জানা গেল, এই গ্রামের বাসিন্দাদের বেশিরভাগ মানুষই মোরগ লড়াইয়ে অংশ নেন।


কৃষি কাজের পাশাপাশি এটাই তাদের মুখ্য পেশা। প্রতি বাড়িতেই রয়েছে বহু সংখ্যক বিশেষ প্রজাতির মুরগী। এলাকার বাসিন্দা কুশল মন্ডল, রবীন্দ্র মন্ডল, যাতিন মন্ডলরা জানান, তারা সারা বছরই পালন করেন এই বিশেষ প্রজাতির অন্ধ্রা মুরগী।এগুলোর ওজন ৮ থেকে ১০ কেজি, উচ্চতা ২ ফুটের কাছাকাছি হয়। জম্বিরাইের বাসিন্দা রবীন্দ্র মন্ডলের বাড়িতে রয়েছে ২ টা বড় মুরগী। এরাই মুলত লড়াইয়ে অংশ নেয়। তিনি বলেন, এখানে প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও মঙ্গলবার খেলা হয়। এই খেলায় অংশ নেওয়ার জন্য সারা সপ্তাহ জুড়ে চলে প্রস্তুতি।


লড়াইয়ে নামার আগে মুরগীর পায়ে বেঁধে দেওয়া হয় ধারালো চাকু। একে অপরকে আক্রমণ করে চলে লড়াই। এতে জয়ী মোরগের মালিক পান ৫ হাজার টাকা। কিন্তু হারলে ফিরতে হয় মৃত মোরগের দেহ রেখে। কুশল বাবু জানান, এই বড় মোরগ গুলোর একেকটির দাম কমপক্ষে ১৩ হাজার টাকা। আর ছোট গুলোর একেকটি হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তিনি আরও বলেন, আমরা এই মুরগী গুলোকে তাদের পরিবারের বাইরে অন্য পরিবারের মুরগীর সাথে মিশতে দিই না। এতে আক্রমণ করার মানসিকতা বেশি থাকে। তাদের কথায়, সকাল ১০টা থেকে খেলা শুরু হওয়ার বাজি চলতে থাকে।


দর্শকরা বাজি ধরেন। আমরা লড়াইয়ে নামাই ওদের। তবে একেকটি খেলা ১ থেকে সর্বোচ্চ ৫ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়। ওই সময়ের মধ্যেই জিত অথবা মৃত্যু ঠিক হয়ে যায়। গ্রামের বাসিন্দারা তাদের প্রতিটা এই প্রজাতির মুরগীকে শক্তিবর্ধক নানা ধরনের খাবার খাওয়ান বলে জানালেন মুরগী মালিকেরা। তবে, পেশার প্রয়োজনে প্রিয় পোষ্যকে লড়াইয়ের ময়দানে হারতে হলে মালিকদের চোখ ভরে থাকে জল আর বুকে পাথর। ফিরে আসেন পোষ্যর মৃতদেহ রেখে।







