





#মালবাজার: মাল পঞ্চায়েত সমিতির রিনা বরা এবং বিদায়ী মাল ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সুশীল কুমার প্রসাদের (বাবুয়া) দ্বৈরথে মাল গ্রামীণ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির অভ্যন্তরে যেন ডামাডোল পরিস্থিতি থামছেই না। বর্তমানে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে চাপের রাজনীতি তৈরি হয়েছে। যা পৌঁছেছে প্রশাসনিক স্তরেও।


সুশীল কুমার প্রসাদের পাশে দাঁড়িয়ে ডামডিম গ্রাম পঞ্চায়েতে কুড়ি জন তৃণমূল কংগ্রেস সদস্যরা সোমবার দুপুরে সরাসরি মালের বিডিও কার্যালয়ে এসে ইস্তফা প্রদানের চিঠি ব্লক প্রশাসনের কাছে তুলে দিয়েছে। যদিও বিডিও শুভজিৎ দাশগুপ্ত ইত্তেফা প্রদানের চিঠি প্রাপ্তি বা এ বিষয়ে কোন মন্তব্যই সংবাদ মাধ্যমে করেন নি। ইস্তাফা পত্র তুলে দিয়ে ডামডিম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তারা শৈব্য বলেন, “যেখানে বাবুয়াদা নেই সেখানে আমরাও নেই”।


এদিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিনই পাল্টা মাল ব্লকের কুমলাই, তেশিমলা, ওদলাবাড়ি ও বাগরাকোট চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রিনা বড়া এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কিছু নেতৃত্বেদের স্বাক্ষরিত চিঠি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বের কাছে জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। রিনার পাশে দাঁড়িয়ে তারা পাল্টা দল পরিচালনার ক্ষেত্রে সুশীল কুমার প্রসাদের পাশাপাশি খোদ রাজ্যের মন্ত্রী এবং বর্তমানে মাল ব্লকে তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বুলু চিক বড়াইকের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।

এই গোষ্ঠীর অভিযোগ দলের বুথ অঞ্চল এবং ব্লক পর্যায়ে আলোচনা না করেই প্রার্থী চয়ন করা হচ্ছে।সম্প্রতি সুশীল কুমার প্রসাদের পাশে দাঁড়িয়ে ডামডিম গ্রাম পঞ্চায়েতের কুড়িজন তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য মন্ত্রী বুলুচিক বড়াইকের হাতে ইস্তফা দানের ইচ্ছাপত্র তুলে দিয়েছিলেন। সোমবার তারাই সরাসরি মালের বি ডি ও কার্যালয়ে চলে আসেন। ডামডিম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তারা শৈব্য বলেন আমরা দলের মন্ত্রীকে বিষয় গুলি জানিয়েছিলাম।

এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থাই হয় নি। এবার আমরা প্রশাসনিক ভাবেও ইস্তফা দানের চিঠি দিলাম। তারার বক্তব্য, মাল পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সুশীল কুমার প্রসাদের নেতৃত্বেই ডামডিম এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ হয়। অথচ মিথ্যা অভিযোগ তুলে সুশীল বাবুর সম্মানহানি করা হয়েছে। সুশীল বাবুর বাড়িতেই আক্রমন করা হয়েছে। তাহলে আমরা নিরাপত্তা কোথায় পাবো? তাই আমাদের আমরা ইস্তফা দিচ্ছি। এদিকে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এতদিন পর্যন্ত দলীয় স্তরে থাকা বিষয়টি এবার প্রশাসনিক স্তর পর্যন্ত চলে আসলো।

এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভাপতি মহোয়া গোপের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, বর্তমানে মাল গ্রামীণ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির কাজ মন্ত্রী তথা দলের নেতা বুলুচিক বড়াইকের মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে। উনিই বিষয়টি দেখবেন। দুপুরে ঘটনাক্রম আবার অন্য মোড় নেয়। জানা গেছে, সোমবারই মাল ব্লকের তেশিমলা, কুমলাই, বাগড়াকোট, ওদলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং মাল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রিনা বরার স্বাক্ষরিত পাল্টা চিঠি জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব এর কাছে জমা পড়ে। তাদের সাথে তমাল ঘোষ, পুলিন গোলদার, অগাস্টুস কেরকেটটা ,সুকান্ত চৌধুরীর মতন নেতৃত্বরাও সামিল ছিলেন।

এই গোষ্ঠী দলের বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রোধে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হস্তক্ষেপ দাবি করেন। এই নেতৃত্বরা রিনা বরার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের অভিযোগ দল পরিচালনার ক্ষেত্রে মন্ত্রী বুলু চিক বড়াইক, সদ্য ব্লক সভাপতির দায়িত্ব থেকে অপসারিত সুশীল কুমার প্রসাদের সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। দলের অন্দরে নতুন টিম তৈরি করা হয়েছে। ব্লকের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আলোচনাতে সামিল করা হচ্ছে না। এতে বিরোধী দলগুলি সুযোগ নিতে শুরু করেছে। এদিকে এভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের আর এক শিবির এবার পাল্টা আসরে অবতীর্ণ হওয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি ফের জটিল আকার নিয়েছে।

পাশাপাশি ডামডিম গ্রাম পঞ্চায়েতের ২২ জন সদস্যদের মধ্যে কুড়িজনের স্বাক্ষরিত সম্বলিত ইস্তফা পত্র যদি গৃহীত হয় সেক্ষেত্রে কি প্রশাসনের থেকে তলবী সভা ডাকা হবে না? সেই প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে কিভাবে গ্রাম পঞ্চায়েত পরিচালিত হবে তা নিয়েও বড়সড়ো প্রশ্ন উঠেছে। মালের বিধায়ক তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণীকল্যাণ এবং আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী বুলু চিক অবশ্য দল পরিচালনা নিয়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বুলু বাবু বলেন, সার্বিক বিষয় এবং পরিস্থিতি নিয়ে জেলা সভাপতি এবং নেতৃত্বদের সাথে আলোচনা করেই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।



