




#দীপক কুমার ঘোষ: গতকাল রাতে প্রাণভরে চন্দ্রগ্রহণ দেখেছি লাটপাঞ্চারে। পাহাড় থেকে গ্রহণ দেখা, এ এক অনন্য অনুভূতি! হোমস্টের ব্যালকনিতে আমরা কজন পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় যেন ভেসে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে শুনতে পাচ্ছি নাম না জানা রাতচরা পাহাড়ি পাখির কাকলি। আজ সকালে যখন ঘুম ভাঙলো, ঘুমচোখে বাইরে এসে দেখি সূয্যিঠাকুর তার আবীর রং ছড়িয়ে দিয়েছে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে। ফ্রেস হয়ে প্রাতরাশ সেরে বের হলাম নগর সংকীর্তনে অর্থাৎ গ্রাম পরিদর্শনে। কি সুন্দর সাজানো গোছানো ছোট্ট গ্রাম!যেন নিপুণ কোন শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা।
মনে পড়লো বিশ্বকবির কৃপণ কবিতার সেই লাইন – কি বিচিত্র শোভা তব কি বিচিত্র সাজ! ফিরে এলাম হোমস্টেতে। লাটপাঞ্চারের কাল শেষ, এবার ফেরার পালা।ড্রাইভার তৈরি। বাই বাই লাটপাঞ্চার। মালপত্র গাড়িতে তুলে রওনা দিলাম। এবারের গন্তব্য্ চটকপুর। যাত্রাপথের প্রথম বিরতি হলো অহলদাড়া ভিউ পয়েন্টে। অপূর্ব অহলদাড়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।ছবির মতো সব হোমস্টে। ওপরে পাহাড় নিচে সবুজ তিস্তা।সারি সারি চা বাগান! ছবি তোলা চললো অনেকক্ষণ, অনেকভাবে। ওখান থেকে বেরিয়ে গাড়ি ছুটে চললো লেপচা মনেস্ট্রি। শুনলাম এটি নাকি চারশো বছরের পুরোনো।
বাইরে থেকে বোঝা যায়না, ভেতরটা অদ্ভুত সুন্দর।পুরো মনেস্ট্রিটা মাটির তৈরি। এরপর এসে থামলাম মহলদিরাম টি গার্ডেন। এ যেন এক মেঘের রাজ্য!ঘন মেঘের চাদরে চারদিক ঢাকা। মাঝে মাঝে মেঘ এসে তার পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে আমাদের শরীরে। অনন্য অনুভূতি সঞ্চয় করে এগিয়ে চললাম বাগোরা ভিউ পয়েন্টের দিকে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে এখান থেকে নাকি তিনশো ষাট ডিগ্রী অর্থাৎ চতুর্দিকের ভিউ মেলে। ভিউ মিললো না ঠিকই কিন্তু যেটা পেলাম সেটাই বা কম কি!একটা আস্ত মেঘ বলাকার দেশ পেলাম যে! যত উপরে উঠছি ঠান্ডার কামড় ততো বড়ছে।
এবার রওনা দিলাম আমাদের অলটিমেট গন্তব্য চটকপুরের উদ্দেশ্যে। চটকপুরের পথ যতটা দুর্গম ঠিক ততটাই বিপদসংকুল। বড় বড় বোল্ডার বসানো অপ্রশস্ত খাঁজে ভরা রাস্তা। একদিকে পাহাড় অন্যদিকে গভীর খাঁদ। গাড়িতে অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসা ঝাঁকুনি। এগিয়ে চলেছি প্রায় গরুর গাড়ির গতিতে। হলফ করে বলতে পারি উত্তম-সুচিত্রাকে এই পথে যেতে হলে তাদের গলা দিয়ে “এই পথ যদি শেষ না হয়” হারগিস বের হতো না!চটকপুর নামটা কে রেখেছিল জানি না, তবে তার দূরদর্শিতার তারিফ না করে পারছি না।
শরীরের অস্থি-মাংস-মজ্জা সব যেন চটকে দিচ্ছিলো গাড়ির ঝাঁকুনি! একসময় পৌঁছালাম আমাদের হোমেস্টেতে। অবাক বিস্ময়ে দেখলাম আমাদের শরীর ইনট্যাক্টই আছে। বিকেলে খানিকটা ঘোরাঘুরি করে দেখে নিলাম চারদিকটা। সন্ধ্যায় পূব আকাশের পূর্ণিমার চাঁদ সঙ্গ দিলো বেশ খানিকক্ষণ। শীতের মাস্তানি ক্রমশ বেড়ে উঠছে।আপাতত কম্বলের নীচে শরীরটাকে ঢুকিয়ে নিজেকে গরম করে নেবার প্রয়াসে ব্যস্ত সবাই। আশা করছি চটকপুর আগামীকাল আমাদের উপহার দেবে সোনারোদ্দুর একটা সকাল। আমাদের সঙ্গে দেখা হবে সেই প্রেমিক কাঞ্চনজঙ্ঘার যার টানে ছুটে এসেছি এতটা পথ।
