News Britant

কুলিক নদীর কাদা পথে : চন্দ্র নারায়ন সাহা ( তৃতীয় পর্ব )

Listen

( খবর টি শোনার জন্য ক্লিক করুন )

কুলিকের ঢাল

বাংলাদেশের মধ্যে নদীটি মূলত দক্ষিণ মুখী হয়ে প্রবাহিত হলেও বাংলাদেশের গোবিন্দপুর থেকে ভারতের মহিষাগাঁওয়ের কাছে দক্ষিণ মুখী হয়ে এ দেশে প্রবেশ করেছে এবং পুনরায় পশ্চিম মুখী হয়ে নদীটি প্রবাহিত হয়েছে। অর্থাৎ এদেশে প্রারম্ভিক ঢাল পশ্চিম মুখী। পরবর্তীতে নদীটি মূলত দক্ষিণমুখী হলেও নদী পথের ঢাল বেশ মৃদু। আর তাই নদীপথে অজস্র মিয়েন্ডার তৈরি হয়েছে। এরপর এলেঙ্গিয়ার কাছে নদীটি পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে এবং সবশেষে দক্ষিণ মুখী হয়ে বিশাহারে নাগরের সাথে মিলিত হয়েছে।

অর্থাৎ সামগ্রিক ঢাল বিচার করলে নদীটি মূলত দক্ষিণমুখী হলেও কোথাও কোথাও পশ্চিমমুখী হয়েও প্রবাহিত হয়েছে।

1974 সালে বন্যার হাত থেকে রায়গঞ্জ শহর কে রক্ষা করার জন্য এই নদীর গতিপথ কে মাটি কেটে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় এবং দীর্ঘ নদী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। নদী বাঁক এর পুরনো খাতগুলোকে বর্তমানে মরা নদী বলে স্থানীয় লোকজন অভিহিত করেন।

কুলিকের মাছ

চারদিনব্যাপী কুলিক নদীর পূর্ব তীর বরাবর সচেতনতামূলক পদযাত্রার শেষে আমরা লক্ষ্য করলাম, বহু জায়গায় আজও প্রাচীন পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয়। সেই জাল দিয়ে নদী থেকে মাছ ধরা, বরশি দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে পাশাপাশি বসে মাছ ধরা চলছে। এছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় মাছ ধরার ক্ষেত্রে বেড়াজাল পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় স্থায়ীভাবে বাঁশ ও কাঠের কাঠামো দিয়ে নিচু অথচ কার্যকরী ছোট ছোট স্পার তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে নদীর সমস্ত জল সেই স্পার গুলির বাধা পেয়ে অল্প ছোট নদী খাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এবং সেই স্পারের মুখে জাল পেতে রেখে মাছধরা চলছে নিয়মিত।


স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল, এই নদীতে আড়, বোয়াল, চিতল মাছের পাশাপাশি রুই মাছের পোনা, রায়খড়, বাটা, বেলে, চিংড়ি, পুটি, তেলাপিয়া, কাঁকলা প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায়। আর্দ্র ঋতুতে নদীতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, আশেপাশের পুকুর বা ভেরি গুলোর মাছ দুকূল উপচে কুলিক নদী তে এসে মেশে এবং প্রায় সারা বছর ধরে সেই মাছগুলি স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের মানুষের রুটিরুজি যোগায়।

কুলিকের তীরবর্ত্তী গাছ

জেলার সদর শহর রায়গঞ্জ কুলিক নদীর তীরে গড়ে উঠেছে দ্বিতীয় বৃহত্তম শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য। এই অরণ্যে নানা প্রকার বৃক্ষের স্বাভাবিক জন্ম ও বৃদ্ধি থাকলেও কুলিক এর তীর বরাবর বিভিন্ন রকম গাছের সহ অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।

ক্রান্তীয় আর্দ্র নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর কারণে নদী তীরবর্তী এলাকায় শাল, সেগুন এর পাশাপাশি আরো যে সমস্ত গাছের প্রাধান্য দেখা যায়, সেগুলি হল- ছাতিম, শিমুল, জারুল, কৃষ্ণচূড়া, তুঁত, পেয়ারা, মেহগনি, হিজল, বকুল, বটলব্রাশ, লাহি, তাল, ডুমুর, তেঁতুল, কদম, খোকসা, করমচা, অর্জুন, গুলঞ্চ, আমলকি, ইউক্যালিপটাস, কুল, গামারি, খয়ের, আমি, আকাশ মনি, লেবু, মীনাজুড়ি এবং বাঁশ প্রভৃতি।


এছাড়াও নদী তীরবর্তী অঞ্চলে পিঠালু গাছের অবস্থান এবং তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা গাছটির গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। এই গাছটির ফল থেকে তৈরি নতুন গাছ একদিকে যেমন নদীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মৃত্তিকা সংরক্ষণ করে, তেমনি এই গাছের ফল নদী তীরবর্তী অঞ্চলের বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যকে অনেকটা সমৃদ্ধ করেছে। গাছগুলির কাঠ অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভজনক।

লক্ষ্য রাখুন পরের পর্বে….

সমগ্র প্রতিবেদনের ঋণ স্বীকার শেষ পর্বে

News Britant
Author: News Britant

Leave a Comment

Also Read