



#প্রসেনজিৎ সরকারঃ আজ সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষ এতটাই অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে যে সোশ্যাল মিডিয়াই যেন ঠিক করে দেয় মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা প্রণালীর ধরন।গোটা বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় হলেও হৃদয়ের আতিথেয়তা ও সম্পর্কের আত্মিকতার সেতুর মাঝে যেন চির ধরে গেছে।মানুষ আজ বড্ড ব্যস্ত। বাংলার ঐতিহ্যশালী সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলি আজ প্রায় অস্তমিত সূর্য।এই ব্যস্ততার যুগে এই অনুষ্ঠানগুলোকে দেখা যেন সময়ের অপচয়ের সামি।
কিন্তু বিগত কয়েক দশক পেছনে ফিরে গেলে আলাদাই এক চিত্রপট ভেসে উঠবে।মানুষের মনে হৃদয়ের টান,আত্মিকতা,আতিথেয়তা,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রসবোধে পরিপূর্ণ ছিল। আর এ সমস্ত কিছুরই মিলনক্ষেত্র হিসেবে কাজ করতো হাট।একাধারে যেমন দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত প্রয়োজন পূরণ হতো হাটে তেমনি সংস্কৃতিক রসবোধ,ব্যথা-বেদনা, ব্যাক্ত করার প্রেক্ষাপটও ছিল এই হাট। এই হাটের মধ্যেই স্থানীয় লোক শিল্পীরা লোকসংগীত,ভাওয়াইয়া গানে মেতে উঠতো এবং কলাকুশলীরা বিভিন্ন কলা প্রদর্শন করে হাটে লোকজনের মন জয় করতো।
এমনকি বিভিন্ন অত্যাচারিত,বঞ্চিত লোকেরাও বিভিন্ন সুরে তাদের দুঃখ বেদনা প্রকাশ করতো এই হাটেই।আজ একবিংশ শতাব্দীতে বাংলার হাতে গোনা কয়েকটি জায়গা ছাড়া হাট প্রায় দেখাই যায় না।আর তার সাথে সাথে সমস্ত লোক শিল্পী ও তাদের কলাগুলোও যেন কোথায় হারিয়ে গেল।|আর সেই হাটের কথা এবং সেই সমস্ত শিল্পী ও তাদের শিল্পকলাগুলোর পুনরুদ্ধারের জন্য অভিনব প্রচেষ্টা করে চলেছেন রায়গঞ্জ কাশিবাটি নিবাসী লোকসংগীত শিল্পী শ্রী তরুণী মোহন বিশ্বাস ও তার পুত্র শ্রী তন্ময় বিশ্বাস।
তারা একটি সুন্দর হাটের গান প্রদর্শন করে গ্রাম বাংলার হাটের পুরোনো চিত্র ও সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন এবং সকলের মন জয় করেছেন। এই গানের কথা ও সুর দিয়েছেন শিল্পী শ্রী তরুণী মোহন বিশ্বাস ও মিউজিকের ব্যাবস্থা করেন শ্রী তন্ময় বিশ্বাস।এই গানে গ্রাম বাংলার হাটের চিত্র যেমন প্রদর্শিত হয়েছে তেমনি বর্তমান পরিস্থিতির করোনার ভয়াবহতা,আমফানের ধ্বংসলীলা,পঙ্গপালের আক্রমণে ফসল ধ্বংস,লক ডাউন চলাকালীন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় খেটে খাওয়া শ্রমিকের দুরবস্থার কথা তুলে ধরেছেন।
একসময় হয়তো আমরা শান্ত স্নিগ্ধ মনোরম পৃথিবী ফিরে পাবো,তার সাথে ফিরে আসুক মানুষের আত্মিক টানের অনুভব,নতুন করে শুরু হোক বাংলার সামাজিক,সাংস্কৃতিক মিলনভূমি হাট এর উত্থান এবং ফিরে আসুক সেই সমস্ত লোক সংগীত শিল্পী ও তাদের শিল্পকলা।
