News Britant

“নামেরির অন্দরে, নামেরির অন্তরে”

Listen

( খবর টি শোনার জন্য ক্লিক করুন )


মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা : অরুণাচলের দীর্ঘ কিন্তু বৈচিত্র্যে ভরা যাত্রার শেষে নামেরির সাথে এক সদ্যোজাত শীতের সন্ধেতে আমার প্রথম আলাপ। অসম- অরুণাচল সীমান্ত লাগোয়া নামেরি জাতীয় উদ্যানটি একটি টাইগার রিজার্ভ হলেও পক্ষীপ্রেমিকদের কাছে স্বর্গতুল্য। কিন্তু আমার কাছে সে যেন এক ভিনদেশী প্রেমিক। দুর্ভেদ্য অরণী চুইয়ে পড়া তার প্রবল পৌরুষ ছুঁয়ে তবে অন্দরমহলে প্রবেশ। বড় বড় গাছগুলো যেন তার বলিষ্ঠ হাত। আর সেই হাত বাড়িয়ে আহবান জানাল সে, “এতটা পথ পেরিয়ে এসেছ আমার কাছে। একটু বিশ্রাম নিয়ে নাও । আমি এই সারারাত জেগে রইলাম তোমার মাথার কাছে।” বাঁশ, কাঠ দিয়ে তৈরি টেন্ট ও কটেজ বানিয়ে সে যেন বহুকাল ধরে আমারই প্রতীক্ষায়।কটেজ এর ডাইনিং রুমে সে আমার জন্যে এলাহি দাওয়াত-এর বন্দোবস্ত করেছে। এছাড়া বাগানে বনফায়ার আর মদিরার অমোঘ হাতছানি।
ঝিঁঝিঁ, নাম না জানা পাখী ও জন্তু- জানোয়ারের ডাক, দূর থেকে ভেসে আসা বুনো ফুলের সৌরভ-এযেন প্রকৃতির মাঝে অনাবিল শয্যা রচনা। কখন যেন দুচোখ জুড়ে এলো।


সকালে উঠে পায়ে পায়ে চিনে নিতে চললাম আমার প্রেমিকপ্রবরটিকে। শুভার্থীরা প্রেমিকের কাছে আমায় একা ছাড়তে ভরসা পেলে না। কাজেই সংগে জুটল ‘কাবাব মে হাড্ডী’ এক গাইড। কিছুকালের মধ্যেই আমার প্রেমিকটি আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল তার আজন্মকালের বান্ধবী ‘জিয়াভরলি’ র। আহ্লাদী মেয়ের মত আমায়ে দেখে তার চপলতা যেন দ্বিগুণত্ব পেল। আমি ফিসফিসিয়ে জানতে চাইলেম, “শুধুই কি মিতা? কভু কি এর প্রেমে পড়নি?” এক দমকা হাওয়ার অট্টহাসি ছুঁড়েছিল আমার দিকে। বল্লো, “জিয়া সারারাত আমায় গান শোনায়।” পথে যেতে যেতে আমার ভাল-মন্দের খোঁজ নিয়ে গেল রেড ব্রেস্টেড প্যারাকিট, ফ্যানটেল, রাডি শেলডাক আর প্রচুর স্মল প্র‍্যাটিনকোল। আমার কানে কানে জানতে চাইলে সে ” যাবে না কী আরও গভীরে”? আমার সাধ্য কি তার আহ্বান উপেক্ষা করি? নৌকা করে নদী পেরিয়ে আর বালির চর ভেঙে ‘পোতাশালি বন দপ্তর।’ শুরু হল এক স্মরণীয় ট্রেইল। সুললিত ছন্দে চলতে চলতে আমি তার জংলি পুরুষালি রূপ আর আঘ্রাণ তুলে হৃদয়ে ভরে নিলাম। ধৈর্য্যশীল যুবকের ন্যায় সে আমায় চেনালো, গ্রেট বারবেট, কমন উড শ্রাইক, ডলার বার্ড, ভার্নাল হ্যাংগিং প্যারট। কখনো বা ইশারায় ডাকলো বুনো গাউর কিংবা বার্কিং ডিয়ার দেখে। প্রায় তিন কিলোমিটার পেরিয়ে এক ওয়াচটাওয়ারে এসে আমাদের পথের সমাপ্তি।

ক্যাম্পে ফিরে লাঞ্চ সেরে আবার বেরিয়ে পড়লাম। আমার দূরদেশি প্রেমিকটির সাথে আবার কবে মিলিত হব, জানিনা। তাই প্রতিটি পল এখন মহার্ঘ্য। হাত ধরে সে আমায় নিয়ে চললে জিয়াভরলির পাড়ে। শুধাল, “করবে কি যৌবনের উদযাপন? ” আমার দোনোমনোতা অগ্রাহ্য করেই আমায় সাজিয়ে দিলো রাফটিং এর পোশাকে। গাল ছুঁইয়ে আলতো আদর করে তার সাবধানবানী, “জিয়া কিন্তু বড্ড দুষ্টু আর অশান্ত।” দীর্ঘ ১৩ কিলোমিটার রাফটিং করতে করতে দেখা পেলাম রাডি শেল্ডাক, কিংফিশার আর হর্ণবিলের। তীব্র স্রোত পেরিয়ে এসে পৌছলাম পোতাশালী ঘাটে। অস্তগামী সূর‍্য সোনারং ঢেলে দিয়েছে চরাচরে। এবার ফেরার পালা।কটেজ থেকে গাড়িতে মাল তুলে দেখি সে চুপিসারে দাঁড়িয়েছে এসে পিছু পিছু। অল্পসময়ে এতটা নিবিড় করে পাব তারে, ভাবিওনি। বিদায়বেলায় তাই দুজনেরি চোখ ঝাপসা। আমার অধরে বিদায়চুম্বন এঁকে সে শুধু বললে, “আবার কবে দেখা হবে?”

দূরে বরফঢাকা পাহাড়

কিভাবে যাবেন: হাওড়া কিংবা শিয়ালদা থেকে গুয়াহাটি। ফ্লাইটে এলে তেজপুর। গুয়াহাটি থেকে নামেরি ২২৫ কিমি। তেজপুর থেকে ৩৫ কিমি।

কোথায় থাকবেন: নামেরি ইকোক্যাম্পে আধুনিক তাঁবু কিংবা কটেজে থাকুন। ডাবল বেডের ভাড়া ২৫০০ টাকা। ফোন: ৯০০৭০০৯০৬১, ৬৫৪৮-৪৩৩৭।

বাঘের পায়ের ছাপ??

মনে রাখুন: রাফটিং এর জন্যে পারমিশন লাগে। ট্রেকিং এর সময় হাল্কা রঙের পোশাক বাঞ্ছনীয়। অযথা চেঁচামেচি করবেন না। জংগলে বাঘ, বুনো হাতি, গাউর, চিতাবাঘ ইত্যাদি আছে, তাই গাইডের অবাধ্য হবেন না। জংগলে প্লাস্টিক, জলের বোতল ফেলবেন না।

News Britant
Author: News Britant

Leave a Comment