News Britant

দুদিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন পাহাড় চূড়ায় লেপচারাজার স্মৃতি বিজরিত ডালিমটার থেকে

Listen

( খবর টি শোনার জন্য ক্লিক করুন )

#দেবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় : ভ্রমণ পিপাসুরা পাহাড় জঙ্গল থেকে সমুদ্রের পাড়ে ঘুরতে ভালোবাসে।সেইসব ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এক নতুন গন্তব্য হতেই পারে লেপচারাজার স্মৃতি বিজরিত ডালিমটার ও ডালিমদুর্গ। ইংরেজরা এই দেশে আসার আগে আমাদের পাশের কালিম্পং বা দার্জিলিং জেলা কখনো সিকিম আবার কখনো ভূটানরাজের অধীনে ছিল। ইংরেজ শাষণের পরে এখানকার ইতিহাস অনেকটাই বদলে যায়। ইতিহাসের কথা নাহয় পরে হবে এখন আসি ডালিমটার ও ডালিমফোর্টের কথায়।

ডুয়ার্সের মালবাজার শহর এখন এক অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। মালবাজার শহর থেকে মাত্র ২২ কিমি দূরে পাহাড়ের চুড়ায় এক অপরুপ নৈসর্গিক সুন্দর জায়গার নাম ডালিমটার।
ডুয়ার্সের মাল মহকুমা এলাকার সাথে গায়ে গা লাগিয়ে রয়েছে পাহাড়ের কালিম্পং জেলার গরুবাথান ব্লক। গরুবাথান ব্লকের সদর এলাকা থেকে মাত্র ৮ কিমি দুরে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছাতে হয় ডালিমটারে। পাহাড়ি রাস্তা খানিকটা ঝুকিপূর্ণ। বড় গাড়ি যায় না স্থানীয় চালকেরা ছোট গাড়ি নিয়ে পৌঁছে দেন। প্রায় ৪০০০ ফুট উচুতে সুন্দরী পাহাড়ি গ্রাম ডালিমটার। পাহাড় দিয়ে উপরে ওঠার সময় মনেই হয়না পাহাড়ের চূড়ায় বেশ খানিকটা সমতল জায়গায় রয়েছে।
এই সমতল এলাকায় কয়েকশ ঘর মানুষের বাস।সবাই প্রায় রাই সম্প্রদায়ের মানুষ। জীবিকা বলতে বড় এলাচ,স্কোয়াশ, কমলালেবুর আবাদ করা ও পশু পালন। ডালিমটারে সম্প্রতি গড়ে উঠেছে এক হোমস্টে। হোমস্টের মালিক দেওপ্রকাশ রাই যথেষ্ট আলাপী।

ডালিমটার নামের ছোট পাহাড়ি গ্রাম থেকে মাত্র আড়াই কিমি দুরে রয়েছে লেপচারাজার স্মৃতি বিজরিত ঐতিহাসিক ডালিম দূর্গের ধ্বংসাবশেষ।সম্প্রতি জিটিএর পক্ষ থেকে এই স্থানকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে ঐতিহাসিক দুর্গকে সংস্কার করা শুরু করেছে। কাজ শেষ হলেই পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ডালিমটার থেকে রাতের বেলায় বহুদূরে শিলিগুড়ি শহরের আলো দেখা যায়।
হোমস্টের মালিক দেওপ্রকাশবাবু জানান, “লেপচা ভাষায় ডালিম শব্দের অর্থ ‘পবিত্র’ এবং ‘টার’ শব্দের মানে ভুমি। লেপচা ভাষায় এই জায়গা পবিত্র ভুমি।
ঐতিহাসিক দূর্গ নিয়ে জানতে চাইতেই।দেওপ্রকাশবাবু জানান, বহু আগে সিকিমের লেপচা রাজা হংস গাবাচোর পুত্র পুনু গাবাচোর সাথে তৎকালীন ভুটানের এক রাজকন্যার বিবাহ হয়। বিয়ের পর পুনু গাবাচো এই এলাকায় থাকতে শুরু করেন। তাদের সন্তান না হওয়ায় পুনু গাবাচো স্থানীয় এক মহিলাকে বিবাহ করেন। এই খবর শুনে ভূটান রাজকন্যা তার বাপের বাড়ি ফিরে যান। এইঘটনায় ভুটান রাজ ক্রুদ্ধ হয়ে পুনু গাবাচোর উপর আক্রমণ করে। যুদ্ধে পুনু গাবাচোর মৃত্যু হয়। তার দ্বিতীয় স্ত্রী তখন পালাতে শুরু করে। পালিয়ে যাওয়ার সময়ে এক ভুটানী সৈনিকের তলোয়ারের আঘাতে দ্বিতীয় স্ত্রীর পেট কেটে যায়। সেই অবস্থায় দ্বিতীয় স্ত্রী পালিয়ে ঝান্ডি এলাকায় চলে যান। সেখানে তার এক পুত্রের জন্ম হয় ও মহিলা মারা যান। সেই নবজাতক পুত্র এক তান্ত্রকের কাছে পালিত হয়। বড় হয়ে সেই পুত্র আবার এই এলাকা নিজের দখলে আনেন। সেই পুত্র তন্ত্রবলে বলিয়ান ছিলেন। তিনিই এই দূর্গ নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তী কালে ইংরেজদের সাথে তার যুদ্ধ হয়। ইংরেজরা গুপ্ত ঘাতক লাগিয়ে তাকে হত্যা করে এবং এই দুর্গকে কামান দেগে ধ্বংস করে দেয়। সম্প্রতি পর্যটকদের আসাযাওয়া করতেই জিটিএ এই দূর্গকে সাজিয়ে তুলছেন”।

আরও জানাগেল, এই দূর্গ থেকে খানিকটা দূরে রয়েছে পাহাড়ের আর এক চূড়ায় রয়েছে পাঁচ পুকুরি নামের এক প্রাকৃতিক জলাশয়। স্থানীয়রা বিশ্বাস করে যে এই জলাশয় শিবের অশ্রুবিন্দু থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে এই জলে কেউ স্নান করে না। স্থানীয়রা এখানে পুজো দেয়।
যারা পাহাড়ে ট্রেকিং করতে ভালোবাসে তাদের কাছে আদর্শ জায়গা এই এলাকা। রক ক্লাইম্বিং করার মতো জায়গা রয়েছে। সব মিলিয়ে কয়েকটি দিন থাকার মতো এক সুন্দর জায়গা।

কিভাবে যাবেন – মালবাজার থেকে বাসে গরুবাথান পর্যন্ত যাওয়া যায়। ছোট গাড়ি ভাড়া করেও যেতে পারেন। সেখান থেকে ছোট গাড়ি ভাড়া করে ডালিমটারে পৌঁছাতে হয়। ভাড়া গাড়ি পিছু ৮০০ টাকা। ৮ জন একসাথে যেতে পারে। হোমস্টতে মাথা পিছু ১০০০ টাকায় গোটা একটা দিন থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। টিফিনে লেপচাদের ট্রেডিশনাল সেল রুটি দেওয়া হয়। তার স্বাদই আলাদা। সব মিলিয়ে পর্যটকদের কাছে এক আদর্শ গন্তব্য হতে পারে ডালিমটার ও ডালিম দুর্গ।

News Britant
Author: News Britant

Leave a Comment