ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তে ত্রিপুরার সাব্রুমে অত্যাধুনিক স্থলবন্দর শনিবার চালু হচ্ছে


#হাবিবুর রহমান, ঢাকা: আগামী শনিবার ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তে ত্রিপুরার সাব্রুমে অত্যাধুনিক একটি আইসিপি স্থলবন্দর উদ্বোধন হতে চলেছে।  ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  শনিবার দিন সকালে ভার্চুয়ালি এই স্থলবন্দর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। আইসিপি হলো আন্তর্জাতিক সীমান্তে অবস্থিত একটি আধুনিক টার্মিনাল ও লজিস্টিক হাব, যেখানে দুই দেশের মধ্যে পণ্য বা যাত্রী চলাচলের সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। অর্থাৎ কার্যত এক ছাদের নিচে সেখানে শুল্ক (কাস্টমস), ইমিগ্রেশন থেকে শুরু করে কন্টেইনার ট্রান্সশিপমেন্ট, ওয়্যারহাউস (গুদাম) ইত্যাদি সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যাতে দুই দেশের মধ্যে অবাধে বাণিজ্য ও যাতায়াত সম্ভব হতে পারে।

আইসিপি স্থলবন্দর চালু হলে সীমান্তবর্তী শহর সাব্রুমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আরও একটি আধুনিক স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে। দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় আইসিপি রয়েছে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন আগামী দিনে সাব্রুম-রামগড়ে বাণিজ্য ও যাত্রী চলাচলের পরিমাণ অনেক ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে সাব্রুমের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটারেরও কম। বাংলাদেশে নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর থেকেও সাব্রুম ১০০ কিলোমিটারের মধ্যেই। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুমতি ভারত অনেক আগেই পেয়েছে।

ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য চলাচলের জন্য সাব্রুম অচিরেই প্রধান গেটওয়ে বা প্রবেশপথ হয়ে উঠবে এই সম্ভাবনা প্রবল। বছর তিনেকের মধ্যে মাতারবাড়ী চালু হয়ে গেলে সাব্রুম দিয়ে ‘ট্র্যাফিক’ যথারীতি আরও বাড়বে। তাছাড়া সাব্রুমে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর ১.৯ কিলোমিটার লম্বা মৈত্রী সেতুও তৈরি হয়ে আছে। ২০২১ সালের ২১ মার্চ নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা যৌথভাবে এই সেতুটির উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু আইসিপি তখন প্রস্তুত না-থাকায় এই সেতুটির ব্যবহার এখনও সেভাবে শুরু করা যায়নি। এখন আইসিপি চালু হলে এই মৈত্রী সেতুতে ব্যস্ততাও অনেক বাড়বে।

সাব্রুম অবধি রেলপথও চালু হয়ে গেছে, যে স্টেশনের সঙ্গে ব্রডগেজে বাকি ভারতের রেল সংযোগও তৈরি। সোজা কথায়, এই মুহূর্তে সাব্রুমে শুধু আইসিপি চালু হওয়ার অপেক্ষা– যেটা হলে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও মানুষে মানুষে আদানপ্রদানের (পিপল টু পিপল কনট্যাক্ট) ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সীমান্তে ভারতের দিকে যেখানে সাব্রুম, ঠিক তার অন্য দিকেই বাংলাদেশের রামগড়। ফেনী নদীর ওপর দিয়ে তৈরি হওয়া মৈত্রী সেতু দুই দেশের এই দুটি জায়গাকে যুক্ত করেছে। আর গত ২২ জানুয়ারি এই সেতুর ওপর নো ম্যানস ল্যান্ডেই ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে আইসিপি চালু করা নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ওই বৈঠকে ভারতের নেতৃত্ব দেন এলপিএআই চেয়ারম্যান আদিত্য মিশ্রা, আর বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন রামগড় পোর্ট কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ডিরেক্টর) সারওয়ার আলম। এছাড়াও স্থানীয় বিজিবি-র কমান্ডিং অফিসার, রামগড়ের ইউএনও, ভূমি ও যান চলাচল বিভাগের কর্মকর্তারাও ওই বৈঠকে যোগ দেন।

ঠিক মাসখানেক আগে যখন ওই বৈঠক হয়, তখন ভারতের দিকে আইসিপি’র কাজ মোটামুটিভাবে ৯০ শতাংশ সম্পূর্ণ হলেও ১০ শতাংশের মতো কাজ বাকি ছিল। আর বাংলাদেশের দিকে সাব্রুমের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তার কিছু অংশে কাজ বাকি ছিল। কিন্তু গত তিন-চার সপ্তাহে প্রায় ঝড়ের গতিতে সেই কাজ শেষ করা হয়েছে এবং তার পর ২৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার আইসিপি উদ্বোধনের সম্ভাব্য দিন হিসেবে ধার্য করা হয়েছে।

News Britant
Author: News Britant

Leave a Comment

Choose অবস্থা